পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত ৩৫ একবার বিদ্যাসাগর তঁাহার জননীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “বৎসরের মধ্যে একদিন পূজা করিয়া ৬৭ শত টাকা বৃথা ব্যয় করা ভাল, কি গ্রামের নিরুপায় অনাথ লোকদিগকে ঐ টাকা অবস্থানুসারে মাসে মাসে কিছু কিছু সাহায্য করা ভাল ?” ইহা শুনিয়া জননীদেবী উত্তর করেন, “গ্রামের দরিদ্র নিরুপায় লোক প্রত্যহ খাইতে পাইলে পূজা করিবার আবশ্যক নাই।” এ কথাটি সহজ কথা নহে,-ৰ্তাহার। নিৰ্ম্মলবুদ্ধি এবং উজ্বল দয়া, প্ৰাচীন সংস্কারের মোহাবরণ যে এমন অনায়াসে বর্জন করিতে পারে, ইহা আমার নিকট বড় বিস্ময়কর বোধ হয়। লৌকিকপ্রথার বন্ধন রমণীর কাছে যেমন দৃঢ়, এমন আর কার কাছে ? অথচ, কি আশ্চৰ্য্যস্বাভাবিক চিত্তশক্তির দ্বারা তিনি জড়তাময় প্রথাভিত্তি ভেদ করিয়া নিত্যজ্যোতিৰ্ম্ময় অনন্ত বিশ্বধৰ্ম্মাকাশের মধ্যে উত্তীর্ণ হইলেন। এ কথা তাহার কাছে এত সহজ বোধ হইল কি করিয়া যে, মনুষ্যের সেবাই যথার্থ দেবতার পূজা ? তাহার কারণ, সকল সংহিতা অপেক্ষা প্রাচীনতম সংহিতা তাহার হৃদয়ের মধ্যে স্পষ্টাক্ষরে লিখিত ছিল । 睿 সিবিলিয়ান হ্যারিসনসাহেব যখন কাৰ্য্যোপলক্ষ্যে মেদিনীপুর জেলায় গমন করেন, তখন ভগবতী দেবী তাহাকে স্বনামে পত্ৰ পাঠাইয়া বাড়ীতে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আনিয়াছিলেন ; তৎসম্বন্ধে তাহার তৃতীয়পুত্ৰ শম্ভুচন্দ্র নিম্নলিখিত বৰ্ণনা প্ৰকাশ করিয়াছেন ;-“জননীদেবী সাহেবের ভোজনসময়ে উপস্থিত থাকিয় তাহাকে ভোজন করাইয়াছিলেন। তাহাতে সাহেব আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়াছিলেন যে, অতি বৃদ্ধ হিন্দুস্ত্রীলোক সাহেবের ভোজনসময়ে চিয়ারে উপবিষ্ট হইয়া কথাবাৰ্ত্ত কহিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন । • • • • • • • • • সাহেব হিন্দুর মত জননীকে ভূমিষ্ঠ হইয়া মাতৃভাবে অভিবাদন করেন । তদনন্তর নানা বিষয়ের কথাবাৰ্ত্ত হইল । জননীদেবী প্ৰবীণ হিন্দুস্ত্রীলোক, তথাপি তাহার স্বভাব অতি উদার, মন আতিশয় উন্নত, এবং মনে কিছুমাত্র কুসংস্কার নাই। কি ধনশালী কি দরিদ্র, কি বিদ্বান