পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত 8 ব্ৰাহ্মণবীর বিজয়ী হইয়া বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত প্ৰমাণ করিলেন এবং তাহা রাজবিধিসম্মত করিয়া লইলেন। বিদ্যাসাগর এই সময়ে আরো এক ক্ষুদ্র সামাজিক যুদ্ধে জয়লাভ করিয়াছিলেন, এস্থলে তাহারও সংক্ষেপে উল্লেখ আবশ্যক। তখন সংস্কৃতকলেজে কেবল ব্ৰাহ্মণেরই প্ৰবেশ ছিল, সেখানে শূদ্রেরা সংস্কৃত পড়িতে পাইত না। বিদ্যাসাগর সকল বাধা অতিক্ৰম করিয়া শূদ্ৰদিগকে সংস্কৃতকলেজে বিদ্যাশিক্ষার অধিকার দান করেন । সংস্কৃতকলেজের কৰ্ম্ম ছাড়িয়া দিবার পর বিদ্যাসাগরের প্রধানকীৰ্ত্তি মেট্রোপলিটান ইনষ্টিটচ্যুশন। বাঙালীর নিজের চেষ্টায় এবং নিজের অধীনে উচ্চতর শিক্ষার কলেজস্থাপন এই প্ৰথম । আমাদের দেশে ইংরাজিশিক্ষাকে স্বাধীনভাবে স্থায়ী করিবার এই প্ৰথম ভিত্তি বিদ্যাসাগরকর্তৃক প্ৰতিষ্ঠিত হইল। যিনি দরিদ্র ছিলেন, তিনি দেশের প্ৰধান দাতা হইলেন ; যিনি লোকাচাররক্ষক ব্ৰাহ্মণপণ্ডিতের বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি লোকাচারের একটি সুদৃঢ় বন্ধন হইতে সমাজকে মুক্ত করিবার জন্য সুকঠোর সংগ্ৰাম করিলেন, এবং সংস্কৃতবিদ্যায় যাহার অধিকারের ইয়ত্ত ছিল না, তিনিই ইংরাজিবিদ্যাকে প্রকৃতপ্ৰস্তাবে স্বদেশের ক্ষেত্রে বদ্ধমূল করিয়া রোপণ করিয়া গেলেন। বিদ্যাসাগর তঁাহার জীবনের অবশিষ্টকাল এই স্কুল ও কলেজটিকে একাগ্ৰচিত্তে প্ৰাণাধিক যত্নে পালন করিয়া, দীনদরিদ্র রোগীর সেবা করিয়া, অকৃতজ্ঞদিগকে মার্জনা করিয়া, বন্ধুবান্ধবদিগকে অপরিমেয় স্নেহে অভিষিক্ত করিয়া, আপন পুস্পকোমল এবং বজ্রকঠিন বক্ষে দুঃসহ ‘বেদনাশল্য বহন করিয়া, আপনি আত্মনির্ভরপর উন্নত-বলিষ্ঠ চরিত্রের মহান আদর্শ বাঙালীজাতির মনে চিরাঙ্কিত করিয়া দিয়া ১২৯৮ সালের ১৩ই শ্রাবণ রাত্ৰে ইহলোক হইতে অপসৃত হইয়া গেলেন। বিদ্যাসাগর বঙ্গদেশে তাহার অক্ষয় দয়ার জন্য বিখ্যাত। কারণ,