পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত c ছেন, তাহার তলদেশ সমস্ত বাঙালীজাতির তীর্থস্থান হইয়াছে। আমরা সেইখানে আসিয়া আমাদের তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতা, নিস্ফল আড়ম্বর ভুলিয়া, সূক্ষ্মতম তর্কজাল এবং স্থূলতম জড়ত্ব বিচ্ছিন্ন করিয়া, সরল, সবল, অটল মাহাক্স্যের শিক্ষা লাভ করিয়া যাইব । আজ আমরা বিদ্যাসাগরকে কেবল বিদ্যা ও দয়ার আধার বলিয়া জানি, এই বৃহৎ পৃথিবীর সংস্রবে। আসিয়া যতই আমরা মানুষ হইয়া উঠিব, যতই আমরা পুরুষের মতো দুৰ্গম-বিস্তীর্ণ কৰ্ম্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে থাকিব, বিচিত্র শৌৰ্য্য-বীৰ্য্য-মহত্ত্বের সহিত যতই আমাদের প্রত্যক্ষ সন্নিহিতভাবে পরিচয় হইবে, ততই আমরা নিজের অন্তরের মধ্যে অনুভব করিতে থাকিব যে, দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাহার অজেয় পৌরুষ, তাহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব এবং যতই তাহ অনুভব করিব, ততই আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ ও বিধাতার উদ্দেশ্য সফল হইবে, এবং বিদ্যাসাগরের চরিত্র বাঙালীর জাতীয়জীবনে চিরদিনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকিবে । 1 ܘ 9 ܠ R শ্রদ্ধাস্পদ শ্ৰীযুক্ত শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয় বিদ্যাসাগরের জীবনীসম্বন্ধে যে প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করিয়াছেন, তাহার আরম্ভে যোগবশিষ্ঠ হইতে নিম্নলিখিত শ্লোকটি উদ্ধৃত করিয়া দিয়াছেন “তরবোহপি হি জীবস্থি জীবন্তি মৃগপক্ষিণঃ { সী জীবতি মনে ফাস্ত মননেন হি জীবতি ॥” “তরুলতাও জীবনধারণ করে, পশুপক্ষীও জীবনধারণ করে ; কিন্তু সে-ই প্ৰকৃতরূপে জীবিত, যে মননের দ্বারা জীবিত থাকে।” - মনের জীবন মননক্রিয়া এবং সেই জীবনেই মনুষ্যত্ব ।