পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હા, চারিত্রপূজা প্ৰাণ সমস্ত দেহকে ঐক্যদান করিয়া তাহার বিচিত্ৰ কাৰ্য্যসকলকে একতন্ত্রে নিয়মিত করে । প্ৰাণ চলিয়া গেলে দেহ পঞ্চ ত্বপ্ৰাপ্ত হয়, তাহার ঐক্য ছিন্ন হইয়া মাটির অংশ মাটিতে, জলের অংশ। জলে মিশিয়া যায়। নিয়তক্রিয়াশীল নিরলস প্ৰাণই এই শরীরটাকে মাটি হইতে, জল হইতে উচ্চ করিয়া, স্বতন্ত্র করিয়া, এক করিয়া, স্বতশ্চালিত এক অপূর্ব ইন্দ্ৰজাল রচনা করে। মনের যে জীবন, শাস্ত্ৰে যাহাকে মনন বলিতেছে, তাহাও সেইরূপ মনকে এক করিয়া তাহাকে তাহার সমস্ত তুচ্ছতা, সমস্ত অসম্বদ্ধতা হইতে উদ্ধার করিয়া খাড়া করিয়া গড়িয়া তোলে, সেই মনন।দ্বারা ঐক্য প্ৰাপ্ত মন বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্ত হইয়া থাকে না, সে মন বাহপ্রবাহের মুখে জড়পুঞ্জের মতো ভাসিয়া যায় না । কোনো মনস্বী ইংরাজিলেখক বলিয়াছেন—“এমন লোকটি পাওয়া দুর্লভ, যিনি নিজের পায়ের উপর খাড়া হইয়া দাড়াইতে পারেন, যিনি নিজের চিত্তবৃত্তিসম্বন্ধে সচেতন, কৰ্ম্মস্রোতকে প্ৰবাহিত এবং প্ৰতিহত করিবার মতো বল যাহার আছে, যিনি ধাবমান জনতা হইতে আপনাকে উৰ্দ্ধে রাখিতে পারেন এবং সেই জনতাপ্ৰবাহ কোথা হইতে আসিতেছে ও কোথায় তাহার গতি, তৎসম্বন্ধে র্যাহার একটি পরিষ্কৃত সংস্কার আছে”। উক্ত লেখক যাহা বলিয়াছেন, তাহাকে সংক্ষেপে বলিতে হইলে বলা যায় যে, এমন লোক দুর্লভ,-“মনো যস্য মননেন হি জীবতি ।” সাধারণ লোকের মধ্যে মন-নামক যে একটা ব্যাপার আছে বলিয ভ্ৰম হয়, তাহাকে খাড়া রাখিয়াছে কিসে ? কেবল প্ৰথা এবং অভ্যাসে । তাহার। জড় অঙ্গগুলি অভ্যাসের আট দিয়া জোড়া—তাহ প্ৰাণের বন্ধনে এক হইয়া নাই। তাহার গতি চিরকালপ্রবাহিত দশজনের গতি, তাহার অদ্যাতন দিন কল্যাতন দিনের অভ্যস্ত অন্ধ পুনরাবৃত্তিমাত্ৰ । জলের মধ্যে তৃণ যেমন করিয়া ভাসিয়া যায়, মাছ তেমন করিয়া