পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগরচারিত \ტ6 ইংরাজিলেখক লেসলি ষ্টফান জনসন সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, তাহার কিয়দংশ অনুবাদ করিয়া দিলাম । “মতের পরিবৰ্ত্তে কেবল কথামাত্রদ্বারা তঁহাকে ভুলাইবার জো ছিল না, এবং তিনি এমন কোনো মতবাদও গ্রাহ করিতেন না,-যাহা অকৃত্রিম-আবেগ-উৎপাদনে অক্ষম। ইহা ব্যতীত তঁহার হৃদয়বৃত্তিসকল যেমন আকৃত্রিম, তেমনি গভীর এবং সুকোমল ছিল। র্তাহার বৃদ্ধ এবং কুগ্ৰী স্ত্রীর প্রতি তাহার প্ৰেম কি পবিত্র ছিল। যেখানে কিছুমাত্র উপকারে লাগিত, সেখানে তাহার করুণা কিরূপ সবেগে অগ্রসর হইত, “গ্রাবস্ত্রীটে”র সর্বপ্রকার প্রলোভন হইতে তিনি কিরূপ পুরুষোচিত আত্মসম্মানের সহিত আপন সন্ত্রমরক্ষা করিয়াছিলেন, সে সব কথার পুনরুল্লেখের প্ৰয়োজন নাই। কিন্তু বোধ করি, এ সকল গুণের একান্ত দুলভিতাসম্বন্ধে মনোযোগ আকর্ষণ করা ভালো । বোধ হয়। অনেকেই আপন পিতাকে ভালোবাসে ; সৌভাগ্যক্রমে তাহা সত্য ; কিন্তু কটা লোক আছে, যাহার পিতৃভক্তি ক্ষ্যাপামি-অপবাদের আশঙ্কা অতিক্রম করিতে পারে ? কয়জন আছেন, র্যাহারা বহুদিনগত এক অবাধ্যতাঅপরাধের প্রায়শ্চিত্তসাধনের জন্য যুটুক্‌সিটারের হাটে পিতার মৃত্যুর বহুবৎসর পরেও যাত্ৰা করিতে পায়েন ? সমাজত্যক্তা রমণী পথপ্ৰান্তে নিরাশ্রয়ভাবে পড়িয়া আছে দেখিলে আমাদের অনেকেরই মনে ক্ষণিক । দয়ার আবেশ হয়। আমরা হয় তো পুলিসকে ডাকি, কিংবা ঠিকাগাড়িতে চড়াইয়া দিয়া তাহাকে সরকারী দরিদ্রাশ্রমে পাঠাই, অথবা বড়ো জোর সরকারী দরিদ্রপালন ব্যবস্থার অসম্পূর্ণতার বিরুদ্ধে টাইমসপত্রে প্রবন্ধ লিখিয়া পাঠাই। কিন্তু এ প্রশ্ন বোধ করি জিজ্ঞাসা না করাই ভালো যে, কয়জন সাধু আছেন, যাহারা তাহাকে কঁধে করিয়া নিজের বাড়িতে সইয়া যাইতে পারেন, এবং তাহার অভাবসকল মােচন করিয়া দিয়া তোহার জীবনযাত্রার সুব্যবস্থা করিয়া দেন। অনেক বড়োলোকের জীবনে