পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা سناوا . সাড়ে চার-আনা করিয়া প্ৰতিদিন। তবু সে হৃদয় ছিল অপরাজিত মহাবলী, প্ৰকৃত মানুষের হৃদয়! অক্সফোর্ডে তাহার সেই জুতাজোড়ার গল্পটা সৰ্বদাই মনে পড়ে ; মনে পড়ে, কেমন করিয়া সেই দাগকাটা মুখ, হাড়বাহির-করা কলেজের দীনছাত্র শীতের সময় জীৰ্ণ জুতা লইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে ; কেমন করিয়া এক কৃপালু সচ্ছল। ছাত্ৰ গোপনে একজোড়া জুতা তাহার দরজার কাছে রাখিয়া দিল, এবং সেই হাড়-বাহির-করা দরিদ্র ছাত্র সেটা তুলিল, কাছে আনিয়া তাহার বহুচিস্তাজালে অস্ফুটদৃষ্টির নিকট ধরিল এবং তাহার পরে জানালার বাহিরে দূর করিয়া ছুড়িয়া ফেলিল। ভিজা পা বলে, পঙ্ক বলো, বরফ বলে, ক্ষুধা বলে, সবই সহ্যু হয়, কিন্তু ভিক্ষা নহে ; আমরা ভিক্ষা সহ্যু করিতে পারি না । এখানে কেবল রূঢ় সুদৃঢ় আত্মসহায়তা। দৈন্যমালিন্য, উদ্ভান্ত বেদন এবং অভাবের অন্ত নাই, তথাপি অন্তরের মহত্ত্ব এবং পৌরুষ ! এই যে জুতা ছুড়িয়া ফেলা, ইহাই এ মানুষটির জীবনের ছাঁচ। একটি স্বকীয়তন্ত্র ( original ) মানুষ, এ তোমার গতানুগতিক, ঋণপ্রার্থী, ভিক্ষাজীবী লোক নহে। আর যাই হােঁক্‌, আমরা আমাদের নিজের ভিত্তির উপরেই যেন স্থিতি করি,-সেই জুতা পায়ে দিয়াই দাড়ান যাক যাহা আমরা নিজে জোটাইতে পারি। যদি তেমনই ঘটে, তবে পাকের উপর চলিব, বরফের উপরেই চলিব, কিন্তু উন্নতভাবে চলিব ; প্ৰকৃতি আমাদিগকে যে সত্য দিয়াছেন, তাহারই উপর চলিব ; অপরকে যাহা দিয়াছেন, তাহারই নকলের উপর চলিব না।” কালাইল যাহা লিখিয়াছেন, তাহার ঘটনাসম্বন্ধে না মিলুক, তাহার মৰ্ম্মকথাটুকু বিদ্যাসাগরের অবিকল খাটে। তিনি গতানুগতিক ছিলেন না, তিনি স্বতন্ত্র, সচেতন, পারমার্থিক ছিলেন ; শেষদিন পৰ্য্যন্ত তেঁাহার জুতা তাহার নিজেরই চটিজুতা ছিল। আমাদের কেবল আক্ষেপ এই যে, বিদ্যাসাগরের বসওয়েল কেহ ছিল না, তাহার মনের তীক্ষ্মতা, সবলতা,