পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գծ চারিত্রিপূজা আশ্রয় লইতে যায়, তেমনি আমরা দেশের দুৰ্গতির দিনে আর সকলকে ফেলিয়া আমাদের স্বদেশীয় মহাপুরুষদিগের আটল আশ্রয় অবলম্বন করিবার জন্য ব্যাকুল হই । তখন আমাদের নিরাশহীদয়ে তাহারা যেমন বলবিধান করিতে পারেন, এমন আর কেহই নহে। ইংল্যাণ্ডের দুৰ্গতি কল্পনা করিয়া কবি ওয়ার্ড স্বাৰ্থ পৃথিবীর আর সমস্ত মহাপুরুষকে ফেলিয়া কাতরস্বরে মিন্টনকেই ডাকিলেন, কহিলেন—“মিন্টন, আহা, তুমি যদি আজ বাচিয়া থাকিতে ! তোমাকে ইংলণ্ডের বড়ই আবশ্যক হইয়াছে।” যে জাতির মধ্যে স্বদেশীয় মহাপুরুষ জন্মান নাই, সে জাতি কাহার মুখ চাহিবে, তাহার কি দুৰ্দশা! কিন্তু যে জাতির মধ্যে মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তথাপি যে জাতি কল্পনার জড়তা, হৃদয়ের পক্ষাঘাত বশতঃ তাহার মহত্ত্ব কোনোমতে অনুভব করিতে পারে না, তাহার কি দুর্ভাগ্য! আমাদের কি দুৰ্ভাগ্য! আমরা বঙ্গসমাজের বড় বড় যশোবুদুন্দদিগকে বালুকার সিংহাসনের উপর বসাইয়া দুইদিনের মতো পুষ্পচন্দন দিয়া মহত্বপূজার স্বপূহ। খেলাচ্ছলে চরিতাৰ্থ করিতেছি, বিদেশীয়দের অনুকরণে কথায় কথায় সভা ডাকিয়া চান্দা তুলিয়া মহত্বপূজার একটা ভাণ ও আড়ম্বর করিতেছি । রামমোহন রায়ের চরিত্র আলোচনা করিবার একটি গুরুতর আবশ্যকতা আছে । আমাদের এখনকার কালে তাহার মতো আদর্শের নিতান্ত প্ৰয়োজন হইয়াছে। আমরা কাতরস্বরে তাহাকে বলিতে পারি -“রামমোহন রায়, আহা, তুমি যদি আজ বাচিয়া থাকিতে ! তোমাকে বঙ্গদেশের বড়ই আবশ্যক হইয়াছে! আমরা বাকৃপঢ়ি লোক-আমাদিগকে তুমি কাজ করিতে শিখাও। আমরা আত্মম্ভরী—“আমাদিগকে আত্মবিসর্জন দিতে শিখাও। আমরা লঘুপ্ৰকৃতি-বিপ্লবের স্রোতে চরিত্ৰগৌরবের প্রভাবে আমাদিগকে অটল থাকিতে শিখাও। আমরা