পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8. চারিত্রিপূজা করে, সে যখন চলিয়া যায়, তাহার অসম্পূর্ণ কাৰ্য্যও তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিয়া যায় ; যদি-বা বিশৃঙ্খল ভগ্নাবশেষ ধূলির উপরে পড়িয়া থাকে, তবে তাহার ভিত্তি কোথাও খুজিয়া পাওয়া যায় না। রামমোহন রায় আপনাকে ভুলিয়া নিজের মহাতী ইচ্ছাকে বঙ্গসমাজের মধ্যে রোপণ করিয়াছিলেন, এইজন্য তিনি না থাকিলেও আজ তাহার সেই ইচ্ছা সজীবিভাবে “প্ৰতিদিন বঙ্গসমাজের চারিদিকে অবিশ্রাম কাজ করিতেছে । সমস্ত বঙ্গবাসী তাহার স্মৃতি হৃদয়পট হইতে মুছিয়া ফেলিতে পারে, কিন্তু তাহার সেই অমর ইচ্ছার বংশ বঙ্গসমাজ হইতে বিলুপ্ত করিতে পারে না । রামমোহন রায়ের আত্মধারণাশক্তি কিরূপ অসাধারণ ছিল, তাহা কল্পনা করিয়া দেখুন। অতি বাল্যকালে যখন তিনি হৃদয়ের পিপাসায় ভারতবর্ষের চতুদিকে আকুল হইয়া ভ্ৰমণ করিতেছিলেন, তখন তাহার অন্তরে-বাহিরে কী সুগভীর অন্ধকার বিরাজ করিতেছিল । যখন এই মহানিশীথিনীকে মুহুর্তে দগ্ধ করিয়া ফেলিয়া তাহার হৃদয়ে প্রখর আলোক দীপ্ত হইয়া উঠিল, তখন তাহাতে তঁাহাকে বিপৰ্য্যস্ত করিতে পারে নাই। সে তেজ, সে আলোক তিনি হৃদয়ে ধারণ করিতে পারিলেন। যুগযুগান্তরের সঞ্চিত অন্ধকারময় অঙ্গারের খনিতে যদি বিদ্যুৎশিখা প্ৰবেশ করে, তবে সে কী কাণ্ডই উপস্থিত হয়, ভূগর্ভ শতধা বিদীর্ণ হইয়া যায়। তেমনি সহসা জ্ঞানের নূতন উচ্ছাস কয়জন সহজে ধারণ করিতে পারেন ? কিন্তু রামমোহন রায় অত্যন্ত মহৎ ছিলেন, এইজন্য এই জ্ঞানের বন্যায় তাহার হৃদয় অটল ছিল ; এই জ্ঞানের বিপ্লবের মধ্যে মাথা তুলিয়া, যাহা আমাদের দেশে ধ্রুব মঙ্গলের কারণ হইবে, তাহা নির্বাচন করিতে পারিয়াছিলেন । এ সময়ে ধৈৰ্য্যরক্ষা করা যায় কি ? আজিকার কালে আমরা তো ধৈৰ্য্য কাহাকে বলে, জানিই না । কিন্তু রামমোহন রায়ের কি অসামান্য ধৈৰ্য্যই ছিল । তিনি আর সমস্ত ফেলিয়া পৰ্বতপ্রমাণ স্তপােকার ভস্মের মধ্যে আচ্ছন্ন যে অগ্নি, ফুৎকার দিয়া