পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহর্ষিার জন্মোৎসব পুণ্যকৰ্ম্মরত দীর্ঘজীবনের একাগ্ৰধারা অন্য যেখানে তাঁটহীন, সীমাশূন্য, বিপুল বিরামসমুদ্রের সম্মুখীন হইয়াছে, সেইখানে আমরা ক্ষণকালের জন্য নতশিরে স্তব্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইব। আমরা চিন্তা করিয়া দেখিব, বহুকাল পূর্বে একদিন স্বৰ্গ হইতে কোন শুভ সূৰ্য্যকিরণের আঘাতে অকস্মাৎ সুপ্তি হইতে জাগ্রত হইয়া কঠিন তুষারবেষ্টনকে অশ্রুধারায় বিগলিত করিয়া এই জীবন আপন কল্যাণ যাত্রা আরম্ভ করিয়াছিলতখন ইহার ক্ষীণ স্বচ্ছধারা কখনো আলোক, কখনো অন্ধকার, কখনো আশা, কখনো নৈরাশ্যের মধ্য দিয়া দুৰ্গম পথ কাটিয়া কাটিয়া চলিতেছিল। বাধা প্ৰতিদিন বৃহদাকার হইয়া দেখা দিতে লাগিল-কঠিন প্ৰস্তরপিণ্ডসকল পথরোধ করিয়া দাড়াইল-কিন্তু সে সকল বাধায় স্রোতকে রুদ্ধ না করিতে পারিয়া দ্বিগুণবেগে উদ্বেল করিয়া তুলিল-দুঃসাধ্য দুৰ্গমতা সেই দুৰ্ব্বার বলের নিকট মস্তক নত করিয়া দিল। এই জীবনধারা ক্রমশ বৃহৎ হইয়া, বিস্তৃত হইয়া লোকালয়ের মধ্যে অবতরণ করিল, দুই কুলকে নবজীবনে অভিষিক্ত করিয়া চলিল, বাধা মানিল না, বিশ্রাম করিল না, কিছুতেই তাহাকে লক্ষ্য হইতে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিল না— অবশেষে আজ সেই একনিষ্ঠ অনন্যপরায়ণ জীবনস্রোত সংসারের দুই কুলকে আচ্ছন্ন করিয়া অতিক্রম করিয়া উঠিয়াছে-আজ সে তাহার সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত চাঞ্চল্যকে পরমপরিণামের সম্মুখে প্ৰশান্ত করিয়া পরিপূর্ণ আত্মবিসর্জনের দিকে আপনাকে প্রসারিত করিয়াছে—অনন্ত জীবনসমুদ্রের সহিত সাৰ্থক জীবনধারার এই সুগভীর সম্মিলনৰ্দশ্য অন্য আমাদের ধ্যাননেত্রের সম্মুখে উদঘাটিত হইয়া আমাদিগকে ধন্য করুক। অমৃতপিপাসা ও অমৃতসন্ধানের পথে ঐশ্বৰ্য্য একটি প্রধান অন্তরায় । সামান্য সোনার প্রাচীর উচ্চ হইয়া উঠিয়া আমাদের দৃষ্টি হইতে অনন্ত আকাশের অমৃত-আলোককে রুদ্ধ করিয়া দাড়াইতে পারে। ধনসম্পদের মধ্যেই দীনহৃদয় আপনার সার্থকতা উপলব্ধি করিতে থাকে-সে বলে, V