পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা c মহিমাকে বড়ো করিবার চেষ্টা হয়,-অন্ধ অহঙ্কারকে প্ৰতিদিন অভ্ৰভেদী করিয়া তোলাকেও শ্রেয় বলিয়া বোধ হইতে থাকে-অবশেষে, ধৰ্ম্ম, যিনি সকলকে ধারণ করিয়া রক্ষা করেন, তাহাকে সবলে আঘাত করিয়া নিজের আশ্রয়শাখাটিকেই ছেদন করা হয়। ধৰ্ম্ম কলের মধ্যেও বিনষ্ট হন, বলের দ্বারাও বিক্ষিপ্ত হইয়া থাকেন। আমরা আমাদের মঙ্গলকে কলের মধ্যে ধরিয়া রাখিতে গিয়া মারিয়া ফেলিয়াছি, যুরোপ স্বার্থোল্পতিকে বলপূর্বক আকর্ষণ করিতে গিয়া প্ৰত্যহই বিনাশ করিতেছে। অতএব, আমাদের প্রাচীন সমাজ আজ নিজের মঙ্গল হারাইয়াছে, দুৰ্গতির বিস্তীর্ণ জালের মধ্যে অঙ্গে-প্ৰত্যঙ্গে জড়ীিভূত হইয়া আছে, ইহা প্রত্যক্ষ দেখিতেছি বটে ; তবু বলিতে হইবে, মঙ্গলকেই লাভ করিবার জন্য ভারতবর্ষের সর্বাঙ্গীণ চেষ্টা ছিল। স্বার্থসাধনের প্রয়াসই যদি স্বভাবের সহজ নিয়ম হয়, তবে সে নিয়মকে ভারতবর্ষ উপেক্ষা করিয়াছিল। সেই নিয়মকে উপেক্ষা করিয়াই যে তাহার দুৰ্গতি ঘটিয়াছে, তাহা নহে ; কারণ, সে নিয়মের বশবৰ্ত্তী হইয়াও গুরুতর দুৰ্গতি ঘটে—কিন্তু সমাজকে সকল দিক হইতে মঙ্গলজালে জড়িত করিবার প্ৰবল চেষ্টায় অন্ধ হইয়া, সে নিজের চেষ্টাকে নিজে ব্যর্থ করিয়াছে। ধৈৰ্য্যের সহিত যদি জ্ঞানের উপর এই মঙ্গলকে প্ৰতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা করি, তবে আমাদের সামাজিক আদর্শ সভ্যজগতের আদর্শের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ স্থান পাইবে । অৰ্থাৎ আমাদের পিতামহদের শুভ ইচ্ছাকে যদি কলের দ্বারা সফল করিবার চেষ্টা না করিয়া জ্ঞানের দ্বারা সফল করিবার চেষ্টা করি, তবে ধৰ্ম্ম আমাদের সহায় হইবেন । কিন্তু কল-জিনিষটাকে একেবারে বরখাস্ত করা যায় না। এক এক দেবতার এক এক বাহন আছে-সম্প্রদায়দেবতার বাহন কল। বহুতর লোককে এক আদর্শে গঠিত করিতে গেলে বোধ করি বারো-আনা । লোককে অন্ধ অভ্যাসের বশবৰ্ত্তী করিতে হয়। জগতে যতো ধৰ্ম্মসম্প্রদায়