পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S চারিত্রিপূজা রকমের নয়। আমার মন যে পথে সহজে চলে, অন্যের মন সে পথে বাধা পায় । আমাদের এই মানসিক বৈচিত্ৰ্যকে অস্বীকার করিয়া সকল মানুষের জন্যই একই বাধা রাজপথ বানাইয়া দিবার চেষ্টা আমাদের মনে আসে। কারণ, তাহাতে কাজ সহজ হইয়া যায়। সে চেষ্টা এ পৰ্য্যন্ত সফল হয় নাই। সফল হওয়া যে অসাধ্য, তাহাও আমরা ভাল করিয়া বুঝিতে পারি নাই । সেইজন্য যে পথে আমি চলিয়া অভ্যস্ত বা আমার পক্ষে যাহা সহজ, সেই পথই যে সকলের একমাত্র পথ নয়, কাহারো পক্ষে যে তাহা দুৰ্গম হইতে পারে, এ কথা আমরা মনেও করিতে পারি না। এইজন্যই, এই পথেই সব মানুষকে টানা আমরা জগতের একমাত্ৰ মঙ্গল ঘলিয়া মনে করি । এই টানাটানিতে কেহ আপত্তিপ্ৰকাশ করিলে আমরা আশ্চৰ্য্যবোধ করি, মনে করি।-সে লোকটা, হয় ইচ্ছা করিয়া নিজের হিত পরিত্যাগ করিতেছে, নয়, তাহার মধ্যে এমন একটা হীনতা আছে, যাহা অবজ্ঞার যোগ্য । কিন্তু ঈশ্বর আমাদের মনের মধ্যে গতিশক্তির যে বৈচিত্ৰ্য দিয়াছেন, আমরা কোনো কৌশলেই তাহাকে একাকার করিয়া দিতে পারিব না । পতির লক্ষ্য এক, কিন্তু তাহার পথ অনেক । সব নদীই সাগরের দিকে চলিয়াছে, কিন্তু সবাই এক নদী হইয়া চলে নাই । চলে নাই, সে আমাদের ভাগ্য । ঈশ্বর কোনোমতেই আমাদের সকলকেই একটা বাধা-পথে চলিতে দিবেন না । অনায়াসে চোখ বুজিয়া আমরা একজনের পশ্চাতে আর একজন চলিব, ঈশ্বর আমাদের পথকে এত সহজ কোনোদিন করিবেন। না । কোনো ব্যক্তি-ৰ্তাহার যতো-বড়ো ক্ষমতাই থাক, পৃথিবীর সমস্ত মানবাত্মার জন্য নিশ্চেষ্ট জড়ত্বের সুগমতা চিরদিনের জন্য বানাইয়া দিয়া যাইবেন, মানুষের এমন দুৰ্গতি বিশ্ববিধাতা কখনই সহ্য করিতে পারেন না ।