পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খ্ৰীস্টীয় ১৮৯৪ সালে ( ১২ অগস্ট,) ইন্দিরা দেবীকে এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখিতেছেন— ‘গেটের জীবনীটা তোর ভালো লাগছে? একটা তুই লক্ষ্য করে দেখে থাকবি— গেটে যদিও এক হিসাবে খুব নির্লিপ্ত প্রকৃতির লোক ছিল তবু সে মানুষের সংশ্রব পেত, মানুষের মধ্যে মগ্ন ছিল । সে যে রাজসভায় থাকত সেখানে সাহিত্যের জীবন্ত আদর ছিল, জর্মনিতে তখন খুব একটা ভাবের মন্থন আরম্ভ হয়েছিল– হের্ডের শ্লেগেল হুম্বোল্ট্‌ শিলার কান্ট, প্রভৃতি বড়ো বড়ো চিন্তাশীল এবং ভাবুকগণ দেশের চারি দিকে জেগে উঠছিল, তখনকার মানুষের সংসর্গ এবং দেশব্যাপী ভাবের আন্দোলন খুব প্রাণপরিপূর্ণ ছিল । আমরা হতভাগ্য বাঙালি লেখকেরা মানুষের ভিতরকার সেই প্রাণের অভাব একান্ত মনে অনুভব করি— আমরা আমাদের কল্পনাকে সর্বদাই সত্যের খোরাক দিয়ে বঁাচিয়ে রাখতে পারি নে, নিজের মনের সঙ্গে বাইরের মনের একটা সংঘাত হয় না বলে আমাদের রচনাকার্য অনেকটা পরিমাণে আনন্দবিহীন হয়।... গেটের পক্ষেও যদি শিলারের বন্ধুত্ব আবখ্যক ছিল, তা হলে আমাদের মতো লোকের পক্ষে একজন যথার্থ খাটি ভাবুকের প্রাণসঞ্চারক সঙ্গ যে কত অত্যাবশ্যক তা আর কী করে বোঝাব ? আমাদের সমস্ত জীবনের সফলতাটা যে জায়গায় সেইখানে একটা প্রেমের স্পর্শ, একটা মনুষ্যসঙ্গের উত্তাপ সর্বদা পাওয়া আবশ্বক— নইলে তার ফুলফলে যথেষ্ট বর্ণ গন্ধ এবং রস সঞ্চারিত হয় না ’১ ૨br>