পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে আমার মিলেচে; তুমিও গেছ হাওয়া বদল করতে আমিও এসেচি হাওয়া বদল করতে। তুমি গেছ কাশী থেকে সোলনে, আমি এসেচি আমার লেখবার ডেস্ক থেকে আমার জানলার ধারের লম্বা কেদারায়। তুমি ভাবচ অতটুকুতে আর বদল কি হল। খুব বদল। তোমাদের বিশ্বনাথের বাড়ি থেকে আর তার শ্বশুরবাড়ি যত বদল তার চেয়ে অনেক বেশি। আমি যে হাওয়ায় ছিলুম এ হাওয়া তার থেকে সম্পূর্ণ তফাৎ। তবে কিনা তোমার ভ্রমণে আমার ভ্রমণে একটি মূলগত প্রভেদ আছে। তুমি নিজে চলে চলে ভ্রমণ করচ কিন্তু আমি নিজে থাকি স্থির, আর আমার সামনে যা-কিছু চলচে তাদেরই চলায় আমার চলা। এই হচ্চে রাজার উপযুক্ত ভ্রমণ— অর্থাৎ আমার হয়ে অন্যে ভ্রমণ করচে, চলবার জন্যে আমার নিজেকে চলতে হচ্চে না। ঐ দেখ না, আজ রবিবার হাটবার, সামনে দিয়ে গোরুর গাড়ি চলেচে— আমার দুই চক্ষু সেই গোরুর গাড়িতে সওয়ার হয়ে বসল। ঐ চলেচে সাঁওতালের মেয়েরা, মাথায় খড়ের আঁটি। ঐ চলেচে মোষের দল তাড়িয়ে সন্তোষবাবুর গোষ্ঠের রাখাল। ঐ চলেচে ইস্টেশনের দিক থেকে গোয়ালপাড়ার দিকে কারা এবং কিসের জন্যে তা কিছুই জানিনে— একজনের হাতে ঝুলচে এক থেলো হুঁকো, একজনের মাথায় ছেড়া ছাতি, একজনের কাধে চড়ে বসেচে একটা উলঙ্গ ছেলে। ঐ আসচে ভুবন ডাঙ্গার গ্রাম থেকে কলসী কাখে মেয়ের দল, তারা শান্তিনিকেতনের কুয়ো থেকে জল নিয়ে যাবে। ঐ সব চলার স্রোতের মধ্যে আমার মনটাকে ভাসিয়ে দিয়ে আমি চুপ করে বসে আছি। আকাশ দিয়ে মেঘ চলেচে, কাল রাত্রিবেলাকার ঝড় বৃষ্টির ভগ্ন পাইকের দল— অত্যন্ত ছেড়া খেড়া রকমের চেহারা। এরাই দেখব আজ সন্ধ্যেবেলায় নীল লাল সোনালি বেগনি উর্দি পরে কাল বৈশাখীর নকিবের মত গুরুগুরু দামামা বাজাতে বাজাতে উত্তর পশ্চিম থেকে কুচ [কাওয়াজ) করে আসতে থাকবে— তখন আর এমনতর ভালমানুষী চেহারা থাকবেনা। > &や