পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গরম পড়েছে। সমস্ত আকাশটা যেন তৃষাৰ্ত্ত কুকুরের মত জিব বের করে হাঃ হাঃ করে হাপাচ্চে। আর এই দুপুর বেলাকার হাওয়া, এ যে কি রকম সে তোমাকে বেশি বোঝাতে হবে না— এই বললেই বুঝবে যে, এ প্রায় বেনরসি হাওয়া, আগুনের লকলকে জরির সুতো দিয়ে আগাগোড়া ঠাস ওর আঁচলা যখন মাঝে মাঝে উড়ে আমাদের গায়ে এসে পড়ে তখন নিজেকে মৰ্ত্তোর ছেলে বলে খুব বুঝতে পারি। আমি কিন্তু আমার ঐ আকাশের ভানুদাদার দূতগুলিকে ভয় করিনে। এই দুপুরে দেখবে ঘরে ঘরে দুয়ার বন্ধ। কিন্তু আমার ঘরে সব দরজা জানলা খোলা। তপ্ত হাওয়া হু হু করে ঘরে ঢুকে আমাকে আগাগোড়া ঘ্ৰাণ করে যাচ্চে। এমনি তার ঘ্ৰাণ যে, ঘ্ৰাণেন অদ্ধ ভোজনং। গরমের ঝাজে আকাশ ঝাপসা হয়ে আছে– কেমন যেন ঘোলা নীল— ঠিক যেন মূচ্ছিত মানুষের খোলা চোখটার মত। সকলেই থেকে থেকে বলে বলে উঠচে, “উঃ, আঃ, কি গরম!” আমি তাতে আপত্তি করে বলচি গরম তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু তার সঙ্গে আবার ঐ তোমার উঃ আঃ জুড়ে দিচ্চ কেন। যাই হোক আকাশের এই প্রতাপ আমি একরকম করে সইতে পারি কিন্তু মৰ্ত্ত্যের প্রতাপ আর সহ্য হচ্চে না। তোমরা ত পাঞ্জাবে আছ– পাঞ্জাবের দুঃখের খবর বোধহয় পাও। এই দুঃখের তাপ আমার বুকের পাজর পুড়িয়ে দিলে। ভারতবর্ষে অনেক পাপ জমেছিল তাই অনেক মার খেতে হচ্চে। মানুয়ের অপমান ভারতবর্ষে অভ্ৰভেদী হয়ে উঠেচে। তাই কত শত বৎসর ধরে মানুষের কাছ থেকে ভারতবর্ষ এত অপমান সইচে, কিন্তু আজো শিক্ষা শেষ হয়নি। আমাদের অনেক ভালো হতে হবে, আমাদের প্রেম পৃথিবীর সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে তবে আমাদের প্রায়শ্চিত্ত হবে। ইতি ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ তোমার ভানুদাদা 〉こbr