পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠিকানা জানতে না। যে ঠিকানায় আমাকে চিঠি লিখেচ সে সম্পূর্ণ তোমার বানানো। তবু যে যথাসময়ে চিঠি আমার কাছে পৌঁছল তার কারণ তোমার ভানুবাদ কোনাে পেষ্ট আপিসের কাছে লুকোনাে নেই। আমাকে কেউ কেউ শুধু ইণ্ডিয়া ঠিকানা দিয়ে চিঠি লিখেচে— তাও আমার হাতে এসে পোঁচেচে। তোমরা ত সবাই এক রাস্তা দিয়ে এক দিকে চলে গেলে, আমি আর ক্ষিতিবাবু আর এক রাস্তা দিয়ে আর এক দিকে চলে গেলুম। সেদিন আর তার পরের সমস্ত দিন রাস্তায় কেটে গেল। কি আর করব, পথের মধ্যে তিন চারটে গান তৈরি করে ফেলুম। তুমি শুনলে হয় ত তোমার ভালো লাগত। কিন্তু জানই ত আমার কি সে রকম গলা আছে যে তোমাকে গান শুনিয়ে খুসি করতে পারি। কিন্তু গলা না থাক সুর ত আছে– তাই মনে মনে অহঙ্কার করি যে আমি সুরলোকের কবি। সুরগুলো মাঝে মাঝে উতলা হয়ে আমার মাথার মধ্যে মৌমাছির বাকের মত পাখা তুলে গুন্গুনিয়ে বেড়ায়। রেলের রাস্তায় সেই গুঞ্জনে আমার মন ভরে গিয়েছিল। ক্ষিতিমোহন আমার কাগু দেখে অবাক্— ধূলোয়, কয়লার গুড়োয়, বাকানিতে, গরমে, অনিদ্রায়, অনিয়মে দল পাকিয়ে যতই উৎপাত করতে থাকল, আমার গান থামতে চায় না— কোনোটা ভৈরবী, কোনোটা পূরবী, কোনোটা বেহাগ, কোনোটা বাউলের সুর। এবার যখন আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে যদি সুর মনে থাকে তাহলে তোমাকে শোনাব। যদি পছন্দ না হয় তাহলে সেটা প্রকাশ কোরো না— বোলো, মন্দ হয় নি। আমাকে এখান থেকে আবার সিন্ধুপ্রদেশে যেতে হবে। ঘুরে ঘুরে দেহ মন অত্যন্ত শ্রান্ত হয়ে গেছে— আর ভাল লাগচেনা। যদি ইতিমধ্যে তোমাকে চিঠি লেখায় পেয়ে বসে তাহলে ও পাতের বোম্বাই ঠিকানায় লিখো— বোলো যে ভানুদাদার কথা মনে করে তোমার মন বেশ খুসি হয়ে আছে। এখানকার কাজ সেরে আমার ফিরতে বোধ হয় চৈত্রমাস পেরিয়ে যাবে। ভানুদাদা