পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লেখায় কেটে গিয়েচে– এক মুহূৰ্ত্ত বিশ্রাম করতে পাই নি— লেখার মাঝে মাঝে খুব ঘুম পেয়েছিল, কিন্তু কষে ঝাকানি দিয়ে ঘুম তাড়িয়ে কাজ করে গেছি। নিজেকে এ রকম করে খুঁচিয়ে কাজ করানো একেবারেই ভাল নয় জানি— তাতে কাজও যে ভালো হয় তা নয় আর বিশ্রামও মাটি হয়ে যায়। কিন্তু আমার কুষ্টির কৰ্ম্মস্থানে শনি আছে সে আমাকে দয়ামায়া একটুও করে না— কষে খাটিয়ে নেয়, মজুরিও যথেষ্ট দেয় না। কাল দিনের বেলায় আবার নানা রকম কাজের পালা আরম্ভ হবে— তাই এখন চিঠি লিখতে বসেচি। এখন সন্ধে সাড়ে আটটা— তোমার ওখানে হয় ত তুমি এখন পড়ার বই নিয়ে বসে গেছ। আজকাল আমাকে যে পড়ায় খাটতুম তা হলে এতদিনে হয় ত আই, এ, পরীক্ষা পাসের তকমা পরে কন্যাকৰ্ত্তাদের মহলে বুক ফুলিয়ে বেড়াতে পারতুম— তাহলে পণের টাকায় বিশ্বভারতীর থলি ভৰ্ত্তি করে দিনে দুপুরে নাকে তেল দিয়ে নিদ্রা দিতে একটুও লজ্জা বোধ হত না। আমার কলকাতার কাজ শেষ হয়ে এল পশু কিম্বা শনিবারে শান্তিনিকেতনে ফিরে যাব । সেখানে এতদিনে শরৎকালের রোদুরে আকাশে সোনার রং ধরেছে আর শিউলি ফুলের গন্ধে বাতাস ভোর হয়ে আছে। আজ বুধবার, আজ থেকে ছেলেরা সব হো হো করতে করতে বাড়িমুখো দৌড়েচে– কাল পশুর মধ্যে আশ্রম প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। এদিকে শুক্লপক্ষ এসে পড়ল। দিনে দিনে সন্ধ্যার পেয়ালাটি চাদের আলোয় ভৰ্ত্তি হয়ে উঠতে থাকবে। আমি বারান্দায় আরামকেদারার উপর পা তুলে দিয়ে একলা চুপ করে বসব— চাদ আমার মনের ভাবনাগুলির পরে আপন রূপের কাঠি ছুইয়ে তাদের স্বপ্নময় করে তুলবে— ছাতিমতলায় ঝরে পড়া মালতী ফুলের গন্ধ জ্যোৎস্নার সঙ্গে মিশে যাবে। সেই সুগন্ধি শুরুরাত আমার মনের এ কোণে ও কোণে উকি দিয়ে কোনো নতুন গানের সুর খুঁজে বেড়াবে— বেহাগ কিম্বা সিন্ধু কিম্বা ११०