পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিজের আত্মগত রিপু, একে আমারই আত্মগত শক্তির দ্বারা হয়ত পরাস্ত করা অসম্ভব হত না— কিন্তু আমার গ্রহ বাইরে থেকে আমার স্কন্ধে যে কাজ চাপিয়েচেন তাকে টলাব কি উপায়ে ? তুমি যাওয়ার পর দেশী বিদেশী কত রকম চিঠি লিখেচি তার সীমাসংখ্যা নেই– তার পরে মনের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তার বোঝা চেপে রয়েচে, সে হচ্চে চীনের বক্তৃতা। এখনো তার একছত্রও লেখা হয় নি— রোজ সন্ধের সময়ে মনকে বুঝিয়ে বলি, ঠাণ্ডা হও, উতলা হোয়ো না, কাল সঙ্কালেই লেখা সুরু করে দেব— কিন্তু আমার মন আমাকে তিন কুড়ি বছর ধরে দেখে এসেচে; সে আমাকে খুব ভাল রকম করেই চেনে; সেই জন্যে আমার আশ্বাস বাক্যে সান্ধনা পায় না— জানে যে আমি নানা অছিলা করে দিন পিছিয়ে দেব। ঠিক তাই ঘটে। রাত্রি অবসান হয়, প্রভাতের আলো দেখা দেয়— ভালোমানুষের মত ডেস্কে গিয়ে বসি কিন্তু চীনের লেকচারের পরিবৰ্ত্তে গান লিখতে বসে যাই। এমনি করে চারদিনে চারটে গান লিখেচি - এই চিঠি আমি বারাদার সেই কোণের কেদারায় বসে লিখচি। যখন লিখতে সুরু করেছিলুম তখন সূৰ্য্য অস্ত যাব যাব করচে– ক্ৰমে ক্রমে লোকসমাগম হতে লাগল— সূৰ্য্য অস্ত গেল, অন্ধকার হয়ে এল, চাদের আলোর মত দেখতে সেই ল্যাম্প জেলে নিয়ে এসে জানলার কাছে রাখলে। লোকসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলল। অবশেষে বনমালী এসে খবর দিলে খাবার এসেচে। খাওয়া শেষ করে সেই প্রদীপের আলোতে সেই কোণের কেদারায় বসে লিখচি– অঙ্গ অঙ্গ ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্চে, তাই পায়ের উপর একটা বালাপোষ দিয়ে গরম হবার চেষ্টায় আছি। আজই চিঠি শেষ করতে চাই কারণ কাল চীনের লেকচার সুরু করব বলে ঠিক করে আছি। আমাদের পাড়া এখন খালি হয়ে গেচে। তোমার সেই সিংহলবাসী ভক্তটি চলে গেচে– আমার প্রতিবেশী বুবুরাও পলাতক, নলিনীরাও চলে গেচে। পশু শুনেচি রর্থী বেীমাও কয়েকদিনের জন্যে ২৩০