পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেশি পার্থক্য না থাকে তাহলে ক্রমে ক্রমে সংসারবন্ধনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনও পাকা হয়ে উঠতে থাকে। যখন পরস্পরের সুখ দুঃখ ও সাংসারিক ক্ষতিলাভকে একান্তভাবে অন্তরঙ্গভাবে আপন করে নিতেই হয় তখন তারই যোগসূত্র দুজনকে ধীরে ধীরে এক করে আনে। জীবনের সম্মিলন থেকেই হৃদয়ের সম্মিলন হতে থাকে। দুজনের সম্মিলিত জীবনের ঐক্যের ভিত্তির উপরেই সংসারের সৃষ্টি হয়। এই সংসারটিই হচ্চে মেয়েদের সৃষ্টিক্ষেত্র, এইখানেই তাদের সমস্ত শক্তি আপনাকে কল্যাণের মধ্যে সুন্দরের মধ্যে প্রকাশ করতে পারে বলে এইখানে যে-মানুষকে মেয়ে আপনার একমাত্র অংশীরূপে পায় তার মূল্য আপনিই তার কাছে বড় হয়ে ওঠে। মঞ্জু আজও তার নিজের সংসারটিকে সৃষ্টি করতে আরম্ভ করে নি বলেই তার মা বাপের সংসার ত্যাগ করে যেতে তার এত কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু যেমুহুৰ্ত্তে তার আপন জীবন দিয়ে তার সংসার সৃষ্টি করতে পারবে, সেই মুহুর্তেই তার বাপমায়ের সংসার তার কাছে ছায়ার মত হয়ে যাবে। এবারে এখনো তেমন গরম পড়ে নি। যদিও এখন বেলা দুটো, তবু হাওয়া তেতে ওঠে নি। বাতাসটি বেশ মিষ্টি হয়ে বইচে, বেশ লাগচে। তুমি ত আমার এখানকার শোবার ঘরটা জন। সেইখানে বসে লিখচি। সামনে আমার পশ্চিম দিক। গগনদের বাড়ির সামনেকার সেই নিম গাছটির পাতায় পাতায় রোদুর ঝিলমিল করে উঠচে। এ কয়দিন বিয়ের গোলমালের অবসানে আজ ক্লাস্তিতে সবাই ঘরে ঘরে ঘুমচে— লালবাড়িটার সামনে বাঁশের উচু মাচা করে যে নহবতখানা তৈরি হয়েছিল সেটা শূন্য এবং নিঃশব্দ পড়ে আছে— ছাদের উপর বাঁশের খুঁটির উপর পাল খাটিয়ে খাবার জায়গা করা হয়েছিল সে সমন্ডই অত্যন্ত নিরর্থকভাবে খাড়া আছে, কোথাও কোনো ব্যস্ততা নেই, জলের জালা, উদ্ধৃত্ত কলা পাতা, খুরি, উৎসবসজ্জার নানা ভগ্নাবশেষ, আবর্জনা হয়ে চারদিকে ছড়াছড়ি যাচ্ছে। মিনু” শ্ৰীমতী রেখা" প্রভৃতি মঞ্জুর সখীরা পাশের ঘরে বৌমা আর মীরার ૨૮:૪