পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্যমনস্ক হয়ে আছি; নীলাকাশে অনিমেষ দৃষ্টি আমার দৃষ্টিতে এসে তেমন অবারিত আত্মীয়তায় মিলচে না, কৰ্ম্মশালার জানলা দরজার র্যাক দিয়ে এই বিশ্বের হৃদয় আগেকার মত তেমন সম্পূর্ণ করে আমার বুকের উপর এসে পড়ে না। মাঝখানে কত রকমের চিন্তর, কত রকমের চেষ্টার ব্যবধান । এই ত দেখচি, সেদিনকার লীলালোক থেকে আজকের দিনের কৰ্ম্মলোকে জন্মান্তর গ্রহণ করেচি। তবু সেদিনকার ভোরবেলার সানাইয়ের সুরে ভৈরবী আলাপ এখনো ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে’ মনকে উতলা করে দেয়। কাল গঙ্গার উপর দিয়ে ভেসে যাচ্চিলুম, তখন কেবলি জলের থেকে আকাশ থেকে তরুচ্ছায়াচ্ছন্ন গ্রামগুলি থেকে এই প্রশ্ন আমার কানে আসছিল, মনে পড়ে কি ? এবারকার এই দেহের ক্ষেত্র থেকে যখন বেরিয়ে চলে যাব তখনো কি এই প্রশ্ন ক্ষণে ক্ষণে আমার হৃদয়ের উপর হাওয়ায় ভেসে আসবে? এবারকার এই জীবনের এই ধরণীর সমত্ত “জননাস্তর সৌহৃদানি?” কাল দোলপূর্ণিমা গঙ্গার উপরেই দেখা দিল। জাহাজ বালির চরে আটকে গিয়েছিল। তাই জোয়ারের অপেক্ষায় রাত্রি সাতটা পৰ্যন্ত আটকা পড়ে ছিল। সমুদ্রে যদি দোল পূর্ণিমার আবির্ভাব হত তা হলেই তার নাম সার্থক হত— তাহলে দোলনও থাকত, আর নীলের সঙ্গে শুভ্রের, সাগরের সঙ্গে জ্যোৎস্নার মিলনও দেখতুম। আজ ভোরে উঠে দেখলুম জাহাজ কুলরেখাহীন জলরাশির উপরে ভেসে চলেছে– “মধুর বহিছে বায়ু।” আজ শনিবার। সোমবারে শুনচি রেজুনে পৌঁছব। সেখানে দিনদুয়েক সভাসমিতি অভ্যর্থনা মাল্যচন্দন, বক্তৃতা, জনতার করতালিতে আমাকে চেপে মারবার চেষ্টা করবে। তারপরে বোধহয় বুধবারে কোনো একসময়ে মুক্তি পাব। ইতি [৯] চৈত্র ১৩৩০ ভানুদাদা ২৬৭