পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাজনদাররা শানাই ঢাক ঢোল বাজিয়ে আকাশ তোলপাড় করতে লাগল। এক একদল করে অভ্যর্থনার দল এসে মোটা মোটা গড়ে মালা আমার কাধে চাপাতে লাগল। কাধে আর জায়গা ছিল না— কাধ ছাপিয়ে মুখের অদ্ধেক ঢাকা পড়ে গেল— মালার ভারে আমার ত মাথা হেট । চষমা সামলানো দায়, নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন। বহুকষ্টে বিষম ভিড় ঠেলে মোটর গাড়িতে উঠে পড়লুম। কিন্তু মোটর চলে কি করে। হাজার হাজার লোক ডাইনে বায়ে ঠেলাঠেলি বাধিয়ে দিয়েচে— তারা আমার পা ছুয়ে যাবে। তাদের তুফানের ভিতর দিয়ে মোটর অতিশয় ধীর গমনে চলতে লাগল। কোনোমতে একটা বাড়িতে এসে পৌঁচেছি। আমার যারা সঙ্গী, যথা, এলমহসী, মিস গ্রীন, কালিদাস, নন্দলাল, ক্ষিতিবাবু সবাই দল বেঁধে গেছেন সহর ঘুরে আসতে। বেশি কিছু দেখবার নেই। শুনেচি কোথায় এক চীনে মন্দির আছে, আর আছে একটা ঝরনা। আমি সম্পূর্ণ একলা। জানলার একদিক থেকে সমুদ্র দেখা যাচ্চে, আর সামনেই আম বট কাঠাল তেঁতুল নারকেলের আন্দোলিত পাতাগুলির উপর সকালবেলার রোদুর ঝলমল করচে। ডানপাশের জানলার নীচে বড় রাস্তা। সেই রাস্তায় লোক দাড়িয়ে গেছে আমাকে দেখবার জন্যে। অনেকদিন পরে মাটির পৃথিবীর পরে আকাশের নীল, আর গাছের সবুজের উপর রোদুরের সোনা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। মনে হচ্চে যেন নিৰ্ব্বাসনের পর ঘরে ফিরে এসেচি। একটা জিনিষ আজও আমার কিছুতেই অভ্যেস হল না। কোনোকালেই হবে না। যখন ভিড় ঠেলাঠেলি করে আমার পায়ের কাছে ভক্তির অর্ঘ্য আসতে থাকে একেবারে যেন মুষলধারায় তখন আমি কিছুতেই তা গ্রহণ করতে পারিনে। এত অদ্ভুত অসঙ্গত মনে হয় যে কেমন যেন আমার মন বিষঃ হয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবি আমাদের লোক কোনোমতে ভক্তি করতে পারলেই বাঁচে বলেই এমনতর অঘটন ঘটে— মুরগীকে পাথরের ডিম দিলেও সে তা দিতে বসে এও তেমনি। আমি মাঝে মাঝে আপত্তি করতে, ՀԳ8