পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রযাত্রার আসনের কাজ করচে। এটা নিতান্ত কম ভারি নয়। এটা ও ডেক থেকে এ ডেকে বহন করে আনতে গিয়ে আমার চোখে যেটুকু ঘুম ছিল সমুদ্রপারে দৌড় মেরেচে। এ জাহাজটা যেমন বড় তেমনি এখানে যাত্রীর ভিড়ও খুব বেশি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্যাবিনগুলোতে একটি বিছানাও র্যাক নেই। আমি কেবল একটা পুরো ক্যাবিন একলা পেয়েচি। এক ক্যাবিনের মধ্যে দু তিনজন বেগানা লোক নিয়ে বাস করা আমার দ্বারা কোনমতেই সম্ভব নয়। অন্য জাহাজের চেয়ে এ জাহাজের ক্যাবিনটা অনেক ভাল। যাত্রীরা নানা জাতের। কেউ জৰ্ম্মন কেউ নরওয়েবাসী কেউ ইংরেজ— তার পরে চিনী জাপানী প্রভৃতি নানা দেশের নরনারীর জটলা হয়েচে। প্রতিদিন সন্ধেবেলায় উপরের ডেকে গ্রামোফোন বাজিয়ে নাচ হয়। প্রথম দিন আমি ছিলুম। দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যার সময় একটুখানি নিরালা পাবার জন্যে আমি নীচের ডেকে একলা এসে বসেছিলুম। এমন সময় মিস গ্রীন এসে বললে, ওরা মনে করেচে ওদের নাচ দেখে আমি বিরক্ত হয়েচি— ওদের ইচ্ছে নয় যে আমাকে কোনো কারণে অস্থির করে। শুনে, আবার আমি উপরের ডেকে ওদের নৃত্যসভায় গিয়ে আসন নিলুম। এলমহর্সট এখনো তার নাচবার সঙ্গিনী জোগাড় করতে পারে নি। তুমি থাকলে নিশ্চয় তোমাকে নাচে টেনে নিত। শেষকালে নিরুপায় হয়ে একজন পুরুষকে নিয়েই ওকে নাচ জমাতে হয়েচে। সেই পুরুষটি হচ্চে কাঠিয়াবাড়ের লিমডির ছোট রাজকুমার। ওদের দুজনের খুব ভাব। আজ রাত্রে ওদের চিত্ৰবেশী নাচ হবে। যাকে বলে Fancy dress ball ! এলমহসটকে বলেচি ধুতি চাদর পরে বাঙালী সাজতে। কুমার তার পাগড়িপরা কুমার বেশেই আসবেন। মিস গ্রীনের ভাবনা নেই, সে সাড়ি থেকে আরম্ভ করে মালয় মেয়েদের বেশভূষা প্রভৃতি নানা জবড়জঙ্গ নানা জায়গা থেকে জোগাড় করে এনেছে। তারি মধ্যে একটা কিছু পরে’ ও বোধ হয় সকলের উপর টেঙ্কা দেবে। দূর হোক গে আবার ঘুম পেয়ে ২৮১