পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্চৰ্য্য এই আমার এই বক্তৃতা সবাই বললে আমার সব চেয়ে ভালো বক্তৃতা হয়েছিল। এলমহল্ট বেরিয়ে এসে বললে, তোমার শুভগ্রহ আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়েচে। যতক্ষণ আমি বক্তৃতা দিচ্ছিলুম তার মন উদ্বিগ্ন হয়ে ছিল, কখন ভেঙে পড়ে। আমার মনে পড়ল সেই বিসর্জন অভিনয়ের কথা— পিঠের দিকে অগ্নিবৃষ্টি হচ্চে, আর আমি একটি ভয়ত্রভা বালিকার হাত চেপে ধরে অভিনয় করে যাচ্চি। আমি সেদিন যদি পালাবার ভাব অভাব ঘটত না। ন্যানকিঙের বক্তৃতা অভিনয় প্রভৃতি সেরে কাল সকাল বেলায় রেল গাড়িতে চড়লুম। আমাদের জন্যে স্পেশল গাড়ি ছিল, বেশ আরামের। সঙ্গে একদল ফৌজ আমাদের রক্ষার জন্যে বরাবর ছিল। আজ ভোরবেলায় এসেচি– ৎিসনানসু নগরে। কিছুকাল পূৰ্ব্বে এই নগর জন্মানির হাতে ছিল, তার পরে জাপানীর। এখন আবার চীনেরা ফিরে পেয়েচে । এখানে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিকেলে সেখানে অভ্যর্থনা ও বক্তৃতা হবে। কিন্তু বড় ক্লাস্ত হয়ে আছি। বিকেলের হাঙ্গামের কথা মনে করে ভয় হচ্চে। আবার সেই ঠেলাঠেলি ভিড়, আবার সেই চিৎকার শব্দে বক্তৃতা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সমস্ত গোলমাল শেষ করে ফেলে কিছুকাল ষোলো আনা নৈষ্কৰ্ম্ম্যের মধ্যে বিশ্রাম করতে পারলে আমি বঁচি । কিন্তু আমার কৰ্ম্মস্থানে শনি— অতএব আমাকে শেষ পর্যন্ত কৰ্ম্ম করাবেই। সুতরাং বিশ্রামের দরকার করে কোনো লাভ নেই, মঞ্জুর হবেনা। কাল সকালে পিকিনে যাত্রা করব— সন্ধাবেলায় পৌছব।" চিঠি ত লিখে যাচ্চি পৌছবে কিনা জানিনে— চীনের ডাকঘরের উপরে খুব বেশি ভরসা কেউ রাখে না— কখনো চিঠি যায় কখনো যায় না, অদৃষ্টের খেলার মত, লেফাফায় তিন আনার স্টাম্প বসিয়ে অনিশ্চিতকে ঠেকিয়ে রাখা যাবেনা। ইতি ৮ [৯] বৈশাখ ১৩৩১ তোমার ভানুদাদা २४rd