পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেন আমার সেই জয়যাত্রার অধিদেবতা নীরব। তার বীণার থেকে যে বাণী পাথেয়স্বরূপ সংগ্রহ করে সমুদ্রে পাড়ি দিতুম সেই আকাশভরা বাণী আজ কোথায় ? কলম্বোতে যে বাড়িতে এসে আছি, এ একজন লক্ষপতির বাড়ি ।” প্রকাগু প্রাসাদ। আরামে বাস করবার পক্ষে অত্যন্ত বেশি টিলে,— ঘরগুলোর প্রকাণ্ড হা মানুষকে গিলে ফেলে। যে ঘরে বসে আছি তার জিনিষগুলো এত বেশি ফিটফট যে, মনে হয় সেগুলো ব্যবহার করবার জন্যে নয়, সাজিয়ে রাখবার জন্যে। বসবার শোবার আসবাবগুলো শুচিবায়ুপ্রস্ত গৃহিণীর মত, সস্তপণে থাকে, কাছে গেলে যেন মনে মনে সরে যায়। এই ধনীঘরের অতি পারিপাট্য, এও যেন একটা আবরণের মত। আমার সেই তেতলা ঘরের চেহারা মনে পড়ে ত? সমস্ত এলোমেলো। সেখানে শোবার বসবার জন্যে একটুও সাবধান হবার দরকার হয় না,— তার অপরিচ্ছন্নতাই যেন তার প্রসারিত বাহু, তার অভ্যর্থনা। সে ঘর ছোটো, কিন্তু সেখানে সবাইকে ধরে। ভানুদাদার মত এতবড় মানুষটাকে ধরে, আর রাণুর মত অতটুকু মেয়েকেও ধরেছিল। মানুষকে ঠিকমত ধরবার পক্ষে হয় ছোট্ট একটি কোণ, নয় অসীম বিস্তৃতআকাশ। ছেলেবেলায় যখন আমি পদ্মার কোলে বাস করতুম তখন পাশাপাশি আমার দুইরকম বাসাই ছিল। একদিকে ছিল আমার নৌকার ছোট ঘরটি, আর একদিকে ছিল দিগন্ত প্রসারিত বালুর চর। ঘরের মধ্যে আমার অন্তরাত্মার নিঃশ্বাস, আর চরের মধ্যে তার প্রশ্বাস। একদিকে তার অন্দরের দরজা, আর একদিকে তার সদরের দরজা। তোমার জীবনে রাণু, যদি আমার মধ্যে সেই সদর দরজাটা খুঁজে পেতে, তাহলে খোলা আকাশের স্বাদ পেয়ে হয়ত খুসি হতে। তোমার অন্দরের দরজার অধিকার দাবী আমার ত চলবে না— এমন কি, সেখানকার চাবিটা তোমার হাতেও নেই, যার হাতে আছে সে আপনি এসে প্রবেশ করবে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমি যা দিতে পারি তুমি যদি তা চাইতে পারতে ఇవి(t