পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>૭૨ [মে ১৯২৫ } [শাস্তিনিকেতন ] কল্যাণীয়াসু রাণু, তোমাকে কাল জন্মদিনের বিবরণ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু আজকাল কেদারায় হেলান দিয়ে বসে থেকে থেকে এমন কুঁড়েমিতে পেয়েছে যে ভালো করে চিঠি লেখা কাকে বলে ভুলে গেছি। লেখা পড়া দুইই আজকাল বন্ধ আছে। প্রায় সমস্ত দিন খোলা আকাশের সামনেই পড়ে থাকি— সামনের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। সেটা ক্রমে বেশ ভালো লাগচে— অর্থাৎ আকাশট, যে শূন্য নয় তা বুঝতে পারচি। যখন ছোট ছিলুম তখন দিনের পর দিন এই আকাশ আমার মন ভুলিয়ে নিয়ে যেত— তারি ডাক শুনে আমি ইস্কুল পালিয়েছি। ইদানীং নানা প্রকারের হট্টগোলে এই ডাকটি আমার কাছে এসে পৌছত না। শরীর অসুস্থ হওয়াতে যেই কৰ্ম্মের দাবী কম হয়েচে আমনি নীলাকাশের বাঁশির স্বর সেইদিনকার মতই আবার আমার বুকের মাঝখানে এসে ছুটির নিমন্ত্রণ করে যাচ্চে। আমার উত্তরায়ণ ঘরের সামনেকার খোয়াইয়ের ধূসরবর্ণ নিস্তব্ধ তরঙ্গের পরপারের সুদূর তালগাছগুলি পশ্চিম দিগন্ডের ভাষাহীন সঙ্কেতের মত অস্তাচলের উত্তরপ্রাস্তবত্তী কোন অনিৰ্ব্বচনীয়ের দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দিচ্চে। এবারকার জন্মদিন সেই পথযাত্রীর জন্মদিন। আজ চৌষট্টি বৎসর পূৰ্ব্বে মেঘমুক্ত আকাশের দীপ্ত আলোর নীচে এই পথিকই জন্মেছিল, বিদ্যার, ধনের, খ্যাতির তীর্থে যাবার জন্যে সে পরওয়ানা আনে নি— হাটের লোকে যাকে অলক্ষ্য বলে জানে তাকেই লক্ষ্য করে সে যাত্রা আরম্ভ করেছিল। এবার পয়ষট্টি বছর বয়সের সুরুতে সেই অতি সাবেককালের কথাটা হঠাৎ আবার মনে পড়ে গেল। পথের সার্থী ●の8