পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেটে যায়। শাস্তিনিকেতনের এ জায়গাটা তোর চেনা নয়। তুই আমাকে এখানকার নানা বাসায় দেখেছিলি – একে একে কত বাসাই বদল হল। শিলঙের সেই বাড়ি মনে পড়ে ? জোড়াসাঁকোয় তেতলার সেই ঘর? শান্তিনিকেতনে কখনো এ কুটীরে কখনো ও কুটীরে। এখন এখানকার চেহারা আর একরকম। আগেকার চেয়ে সমারোহ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু আগেকার সাদাসিধে সেই সংসারটা ছিল ভালো। যদি কোনো একদিন আর একবার শাস্তিনিকেতনে এসে দেখে যাওয়া তোর পক্ষে সম্ভব হয় হয়তো তোর ভালো লাগবেনা। সেই সব চেনা জায়গাগুলোও এখন অচেনার মুখোষ পরে আছে। কেবল সেই আকাশ, সেই মাঠ, সেই রাঙা মাটির পথ তেমনই আছে। আর তোর ভানুদাদা? তখন যে পরিমাণ জায়গার মধ্যে তার কাজের এবং ভাবের বাসা বেঁধে ছিল তার চেয়ে অনেক ছড়িয়ে পড়েচে, সমুদ্রের এপারে ওপারে, দেশ থেকে দেশাস্তর। কিন্তু নিজেকে নিয়ে এতখানি ছড়াছড়ি আর ভালো লাগেনা। কাজ খাটো করে ছোট একখানি জায়গায় আসন পেতে বসতে ইচ্ছে করে— একটুখানি ছবি আঁকি, গান বাঁধি, বাগান করি, আর সঙ্গে, কিছু দেখাশুনো গল্প স্বল্প হাসি তামাসা। কিন্তু সে আর ঘটে উঠবেনা। একেবারে রাভার চৌমাথায় চৌকি পড়েচে— ঘোরতর হট্টগোলের মাঝখানেই জীবনের বাকি কটা দিন কাটবে। এখানে দিনগুলো ভালোই যাচ্চে । আকাশে একদল অকেজো মেঘ কেবলি পূব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পূবে অকারণে ঘোরাঘুরি করে বেড়াচ্চে— দিনরাত হু হু করে বাতাস বইচে— চারদিক সবুজ— জ্যৈষ্ঠমাসের রুক্ষ চেহারা কোথাও নেই। কলকাতায় যাবার মতো জোর এখনো পাই নি। যদি যাওয়া ঘটে নিশ্চয়ই তোর সঙ্গে দেখাও ঘটবে। ইতি [ ? জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৯] ভানুদাদা Vථvථථ