পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেখানে আমি সংসারের কাজ করবার ক্ষেত্রে, সেখানে আমাকে যদি না চিনতে পার তাহলে আমার কাছে এসেও আমার আসল কাছে আসা হবেনা। আবার আমি খুব ছোটও বটে, তোমাদের সমান বয়স, এমন কি তোমাদের চেয়ে ছোট,– তুমি আমাকে দেখবে শুনবে খাওয়াবে পরাবে সাজাবে আমার সে বয়সও আছে। তাই সন্ধ্যাবেলায় মোড়ায় বসে তুমি যখন আমার কাছে নানা বিষয়ে গল্প বলে যাও সে আমার খুব মিষ্টি লাগে। সন্ধ্যা আকাশের তারা ঈশ্বরের খুব বড় সৃষ্টি, কিন্তু সন্ধ্যায় ছাদে রাণুর মুখের কথাগুলি তার চেয়ে কম বড় নয়— ঐ তারার আলো যেমন কোটি কোটি যোজন দূরের থেকে আসচে– তেমনি তোমার হাসি গল্প শুনতে শুনতে মনে হয় যেন কত জন্ম জন্মান্তর থেকে তার ধারা সুধাস্রোতের মত বয়ে এসে আমার হৃদয়ের মধ্যে এসে জমচে । কিন্তু রাণু, ঈশ্বরের যে সব দান, খুব বড়, খুব সুন্দর, তার সম্বন্ধে আমাদের যেন কৃপণতা না থাকে— সামান্য টাকাকড়ি তালা বন্ধ করে পাহারা দিয়ে রাখবার কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ আলোর মত, তা একজায়গায় জ্বাললে সে জায়গাকে ছাড়িয়ে চলে যায়। মাধুর্যের উৎস যখন আমাদের মনে একবার উৎসারিত হয় তখন আমাদের চারিদিককে তা মধুময় করে তোলে। তখন সেই ভালবাসায় আমরা সকলকেই বেশি করে ভালবাসি ; শক্তি বাড়ে। আমার খুব দুঃখের সময়েই তুমি আমার কাছে এসেছিলে— আমার যে মেয়েটি সংসার থেকে চলে গেছে সে আমার বড় মেয়ে, শিশু কালে তাকে নিজের হাতে মানুষ করেছি ; তার মত সুন্দর দেখতে মেয়ে পৃথিবীতে খুব অল্প দেখা যায়। কিন্তু সে যে মুহুৰ্ত্তে আমার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল সেই মুহূৰ্ত্তেই তুমি আমার কাছে এলে— আমার মনে হল যেন এক স্নেহের আলো নেবার সময় আর এক স্নেহের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেল।’ আমার কেবল নয়, সেদিন যে তোমাকে আমার 8 O