পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দোলাচলে তিনি নিজেকে কতটা অসহায় মনে করেছেন ফণিভূষণ ও সরযূবালাকে লেখা তার কয়েকটি চিঠিতে তার আভাস পাওয়া যাবে। রাণুর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রণয়প্রার্থীরা যখন কাশী গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন, বেনামী চিঠি লিখে তার চরিত্রে কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা শুরু করেছেন, তখন রাণুর পিতামাতা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে তার বিয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খোজার চেষ্টা করছেন জেনে রবীন্দ্রনাথ প্রথমে এই প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারেন নি। তিনি ফণিভূষণকে লেখেন, শীঘ্রই রাণুর বিবাহ দিয়ে সমস্যা সমাধানের যে চিন্তা করচ আমার কাছে সেটা ভালো বলে ত ঠেকচে না, তাতে সামাজিক সমস্যার মীমাংসা হতেও পারে, কিন্তু রাণুর নিজের পক্ষে সেটা সুখকর কিম্বা কল্যাণকর হবে কিনা সেটাই বিশেষ করে ভাববার কথা। ...আমার ত মনে হয় আরো কিছুদিন পড়াশোনার ভিতর দিয়ে নিয়ে গিয়ে বৰ্ত্তমান এই সমস্ত জঞ্জালের চিহ্ন মুছে ফেলা সৰ্ব্বপ্রথমে দরকার। তারপরে অপেক্ষাকৃত সুস্থ শাস্ত হলে ওর সম্বন্ধে সুব্যবস্থা সহজ হবে। তিনি ফণিভূষণ ও সরযুবালাকে রাণুর অনুরাগী একটি যুবকের কথা ভেবে দেখতেও বলেছেন। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ সেরে ইটালি হয়ে দেশে ফিরেই যখন তিনি শুনলেন, সাহিত্যিকা অনুরূপা দেবীর দৌত্যে বিখ্যাত ধনী স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র বীরেন্দ্রনাথের সঙ্গে রাণুর বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছে তখন তা মেনে নিয়েছেন। তবে খুব প্রসন্ন মনে যে সম্মতি দেন নি তা বোঝা যায়, বিদেশযাত্রার আশু প্রয়োজনের প্রসঙ্গ তুলে রাণুর বিবাহে উপস্থিত থাকা নিয়ে দোলাচলতার কথা জানিয়ে। এর পরেও বিবাহটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় নি। রাণুকে, রাণুর পিতামাতাকে, রবীন্দ্রনাথকে, এমন-কি রাণুর ভাবী শ্বশুরবাড়িতে হতাশ প্রার্থীরা বেনামী চিঠি পাঠিয়ে ভয় দেখাতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত অস্বক্তিবোধ করেছেন নিজেকে এই দুর্ঘটনার জন্য কিছুটা দায়ী ভেবে। তা সত্ত্বেও তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা ○ ●8