পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়ে বসেছিলেম। আর খানিকবাদে কাজে বসতে হবে তাই রীতিমত বিছানায় শুইনি। আকাশ ঘন মেঘে অন্ধকার হয়ে গেছে— পশ্চিম দিক থেকে মাঝে মাঝে সে সে করে ঝোড়ো বাতাস বইচে । ইন্দ্রের ঐরাবতের বাচ্ছাগুলোর মত মোটা মোটা কালো কালো মেঘ আকাশময় ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্চে— মাঝে মাঝে গুরু গুরু গর্জন শোনা যাচ্চে। সামনে সবুজ মাঠের উপরে মেঘলা দিনের ছায়া পড়েচে, নিবিড় স্নিগ্ধতার মধ্যে চোখ ডুবে গেছে। তোমাকে লিখতে লিখতে বৃষ্টি নেমে এল— বৃষ্টি একটুমাত্র দেখা দিলেই আমার এই বারান্দায় তার পায়ের শব্দ তখনি শোনা যায়। দূরে ভুবনডাঙার দিকে বাঁধের কাছে যে ঘন বনশ্রেণী দেখা যায় বৃষ্টির ধারায় সেটা একটু ঝাপসা হয়ে এসেচে— বনলক্ষ্মী যেন তার পাৎলা ওড়নাটাকে মুখের উপর ঘোমটা টেনে দিয়েচে। কটা বেজেচে ঠিক বলতে পারিনে। আমার সামনের দেয়ালে যে ঘড়িটা ছিল, তাকে নিৰ্ব্বাসিত করে দিয়েচি— ইদানীং তার ব্যবহার এমন হয়ে এসেছিল যে তাকে বিশ্বাস করবার জো ছিল না— সে চলতেও ভুল, বলতেও ভুল, তার পরামর্শ মত খেতে শুতে গিয়ে অনেকবার আমি ঠকেচি। তবু উপযুক্ত উপায়ে তাকে যে সংশোধন করা যেত না তা বলতে পারিনে— কিন্তু সময়ের জন্য ঘড়ি ; ঘড়ির জন্যে সময় নষ্ট করা আমার পোষায় না। যাই হোক আন্দাজে মনে হচ্চে একটা দেড়টা হয়ে গেছে, আর একটু বাদেই আমাকে একটা ক্লাস পড়াতে হবে। আজকাল প্রায় জন পনেরো গুজরাটি ছেলে এসেচে, কি করে তাদের বাংলা পড়াতে হবে সেইটে আজ আমি দেখিয়ে দেব— বৌমা আর শৈল’, ওদের দুপুর বেলা একঘন্টা করে বাংলা পড়াতে রাজি হয়েচে । ইতিমধ্যে এভুজ সাহেবের খুব অসুখ করেছিল। আমাদের ভাবনা হয়েছিল। একদিন ত রাত্রে তার নিজের মনে হল তার ওলাউঠো হয়েচে । সেই রাত্রি একটার সময় বদ্ধমানে ডাক্তার ডাকতে লোক পাঠিয়ে দিলুম।