পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেলায় পাই— তাই বোধ হচ্চে ডাকঘর কাল আমার মত দুপুর বেলায় তাকিয়া ঠেসান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। দুপুর বেলায় চিঠি পেলে সুবিধে হয় চিঠির জবাব দেওয়ার অনেকটা সময় পাওয়া যায়। আজ সকালে আর একটু পরেই আমার ক্লাস বসবে। কিন্তু আকাশ মেঘে অন্ধ হয়ে আছে। ছেলেরা প্রাণপণে প্রার্থনা করচে এখনি খুব যেন চেপে বৃষ্টি হয়, তাহলেই তাদের ক্লাস বন্ধ থাকে। কিন্তু বোধ হচ্চে বিধাতা আজ তাদের সঙ্গে কৌতুক করবেন, অর্থাৎ যেই তাদের ক্লাস হয়ে যাবে অমনি খুব ঝমঝম্ করে বৃষ্টি আরস্ত হবে। গেল চিঠিতে তোমাকে বিশ্বপ্রকৃতির কথা লিখেছিলুম। খুব যখন ছোট ছিলুম তখন থেকেই আমি, ঐ যে মহাকাশে আলোছায়ার রঙ্গ-ভূমিতে সৃষ্টির লীলা চলচে, তাই দেখে দেখে মুগ্ধ হয়েচি। তখন ছেলেবেলায় ঠাকুরকে জানতুম না, কিন্তু বিশ্বপ্রকৃতিকে ভালবাসাতে আমার সুবিধা হয়েছিল। আমি তাই ঠাকুরের নাটমন্দিরের দিকে তাকাতে শিখেছিলুম। আমার আর এক সুবিধা হয়েছিল, আমার সেই ভালবাসার চর্চা হয়েছিল যে ভালবাসায় মন আনন্দ পায় অথচ মুক্ত থাকে। সেই মুক্তি আমার মনকে টানে। আমি তাই বন্ধনে নিজেকে জড়াতে পারিনে। কেননা জড়াতে গেলেই বিশ্বের উপর এবং নিজের জীবনের উপর আমার অধিকার ছোট হয়ে আসে। মানুষকে আমি খুব একান্ত মনে ভালবাসতে পারি কিন্তু সে ভালবাসা যদি বন্ধন হয়, যদি আর সমস্তকে আচ্ছন্ন করে নিজেকেই সৰ্ব্বপ্রধান করে তোলে তাহলেই সে বন্ধন বারবার আমাকে ছিন্ন করতে হয়। বৃষ্টির জলকে গর্ত কেটে জলাশয়ে ধরে রাখা যায় কিন্তু নদীর জলকে বাঁধ বেঁধে সম্পূর্ণ আটকে ফেলতে গেলে তার নদী-প্রকৃতিকেই ব্যর্থ করে দেওয়া হয়— এই জন্যে সে বাঁধন টেকে না— একদিন না একদিন সে বাঁধ প্রবল বেগে বিদীর্ণ হয়ে যায়। এ সংসারে আমার জীবনকে চলতে হবে সামনের দিকে, সকলের দিকে এবং অনন্ত সাগরের দিকে; আমার উপরে এই হুকুম— এই জন্য Q○