পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার সমুখের পথ খোলা থাকবেই। এই জন্যে পৃথিবীতে অনেক বাঁধন আমার সামনে এল কিন্তু যেই তারা পথ রোধ করতে চাইল অমনি তারা টিকল না— সংসারে আমার কত বন্ধন যে ছিন্ন হয়েছে তার আর সংখ্যা নেই। কেননা, আমার মধ্যে যে স্রোতের বেগ সে ত আমার নিজের বা আর কারো জিনিস নয়, এবং যে পথে আমাকে চলতে হবে সে পথও আমার বা আর কারো নয়— আমার বিধাতার হুকুমকে যে-কেউ রোধ করতে যাবে তাকে হার মানতে হবে। তাই চিরদিন আমার মনটা পথের পথিক— পান্থশালায় কখনো কখনো একরাত্রি দুরাত্রি থাকে আবার তাকে বেরতেই হয়— চুপ করে বসে বসে জিনিসপত্র গুছিয়ে বিছানাপত্র পেতে আদরে যত্নে আরামে নিজেকে বা আমাকে ভোগ করবার ছুটি তার নেই। দুৰ্ব্বল মন মাঝে মাঝে আরাম করতে চায় কিন্তু প্রবল আদেশ তাকে টেনে বের করে। এই জন্যে ঘর আমার নয়, সুখ আমার নয়, কোনো বিশেষ মানুষ আমার নয়। আমি তারই যিনি সমস্ত বিশ্বজগতের। এখনো তার উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারিনি— এখনো “ঘরে আধা বাইরে আধা”— কিন্তু সে আধা একদিন হয়ত ঘুচ্বে। কিন্তু মোটের উপরে আমি মুক্তিকে ভালবাসি, এবং যে ভালবাসা মুক্ত আমি সেই ভালবাসাকে বিধাতার দান বলে গ্রহণ করি। আমার ভালবাসাও যদি মানুষকে মুক্তি না দিয়ে তাকে কেবল আমার মধ্যেই বদ্ধ করে ফেলে তাহলে তাতে আমি দুঃখ পাই, লজ্জা বোধ করি। আমার ভালবাসায় মানুষকে বড় করে দেবে, সকল মানুষের করে তুলবে, সংসারের মঙ্গলকৰ্ম্মে জীবন উৎসর্গ করতে নিষ্ঠা দেবে, দুঃখ সহ্য করবার এবং আনন্দ বিতরণ করবার শক্তি দেবে এই আমি প্রার্থনা করি। ইতি ২৪ শ্রাবণ ১৩২৫ তোমার রবিদাদা (28