পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি কি বলেছিলুম জান ? এই সৃষ্টির দিকে প্রথম তাকালে দেখতে পাই এর আগাগোড়া সমস্ত নিয়মে বাঁধা, এর সমস্ত অণু পরমাণুর মধ্যে নিয়মের ফাক এতটুকুও নেই। কেমন জান ? যেমন একটি সহস্র তার-বাঁধা বীণাযন্ত্র। এই বীণার প্রত্যেক তারটি খাটি তার, প্রত্যেকটি খুব খাটি হিসাব করে বাঁধা, অর্থাৎ এই বীণাটির তুম্বী থেকে আরম্ভ করে এর সূক্ষ্মতম তারটি পর্যন্ত সমস্তই সত্য। কিন্তু না হয় সত্যই হল তাতে আমার কি ! বীণার তার-বাঁধার খাটি নিয়ম নিয়ে আমি কি করব ? তেমনি এই জগতে সূর্যচন্দ্রগ্রহ অণু পরমাণু সমস্তই ঠিক সময় রেখে ঠিক নিয়ম রেখে চলচে এই কথাটা যত বড় কথাই হোক না কেবল তাতে আমাদের মন ভরে না। আমরা এই কথা বলি, শুধু বীণার নিয়ম চাইনে, বীণার সঙ্গীত চাই। সঙ্গীতটি যখন শুনতে পাই তখনি ঐ বীণাযন্ত্রের শেষ অর্থটি পাই— তা নইলে ও কেবল খানিকটা কাঠ এবং পিতল। জগতের এই বীণাযন্ত্রে আমরা সঙ্গীতও শুনেছি; শুধু কেবল নিয়ম নয়। সকালবেলার আলোতে আমরা শুধু কেবল মাটি জল, শুধু কেবল কতকগুলো জিনিস দেখতে পাই, তা নয়। সকাল বেলার শাস্তি স্নিগ্ধতা সৌন্দৰ্য্য পবিত্রতা সে ত কেবল বস্তু নয়, সেই হচ্চে সকালের বীণাযন্ত্রের সঙ্গীত। তারই সুরে আমাদের হৃদয়, পাখীর সঙ্গে মিলে, গান গাইতে চায়। যেখানে বীণা শুধু বীণা, সেখানে সে বস্তুমাত্র— কিন্তু যেখানে বীণায় সঙ্গীত ওঠে সেখানে বীণারও পিছনে আমাদের ওভাদজি আছেন, সেই ওস্তাদজির আনন্দ গানের ভিতর দিয়ে আমাদের মনে আনন্দ দেয়, সৃষ্টির বীণা ত ওস্তাদজি বাজিয়ে চলেচেন কিন্তু আমাদের নিজের চিত্তের বীণাও যদি সুরে না বাজে, তাহলে আমাদের হৃদয় বীণার ওস্তাদজিকে চিন্‌ব কি করে? তার আনন্দরূপ দেখব কি করে? না যদি দেখি তা হলে কেবল বেসুর, কেবল ঝগড়া বিবাদ, ঈর্ষা বিদ্বেষ, কেবল কৃপণতা স্বার্থপরতা, কেবল লোভ এবং ভোগের লালসা। আমাদের জীবনের মধ্যে যখন সঙ্গীত বাজে তখন নিজেকে ভুলে যাই, Qbr