পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাকে দেখে তোমার মুখশ্রী একটুও বিবর্ণ হল না— এসে যখন আমার হাত ধরলে তখন তোমার হাত একটুও কঁপিল না, অনায়াসে কথাবার্তা আরম্ভ করে দিলে, কণ্ঠস্বরে একটুও জড়িমা প্রকাশ হলনী— একি কাণ্ড বল দেখি? আমার নিজেরই এক এক সময় মনে হয় আমি হয় ত ছদ্মবেশী আমার ভিতরের ছেলেমানুষী ফস করে ধরা পড়ে যায়– বিশেষত ছেলেমানুষদের কাছে। আমার ফাল্গুনীতে সেই কথাটাই লিখেচি– পৃথিবীতে বুড়োটাই ফাকি, সে একটা মুখস মাত্র— জলে স্থলে আকাশে যৌবন আর কিছুতেই মরে না— তাই আকাশের ললাটে বলির চিহ্ন নেই, তাই হাজার লক্ষ বৎসরের সমুদ্র আজো ছেলেমানুষের মত কলরোলে নৃত্য করচে, তাই পৃথিবীর শ্যামলতা চিরনবীন, তাই তারাগুলি সদ্যোজাত জ্যোতিঃশিশুগুলির মত অন্ধকারের কোল জুড়ে নীরবে পড়ে আছে। তুমি যে মনে করচ আজ আমার এই “সাতাশ" বছর বয়স থেকে আর পনেরো যোলো বছর পরে কোনো একদিন আমি আটাশে পড়ব— আমি তা বিশ্বাস করি নে। আমি দেখচি বরাবর ঐ সাতাশেই আটকে থাকব। কিন্তু আমার একটা ভাবনা আছে– তুমি যদি তখন হুহু করে বড় হয়ে উঠতে থাক তাহলে আমি কি করব? তুমি তখন হয়ত সবেগে আটাশ উনত্রিশ ত্রিশ একত্রিশ পেরতে থাকবে, আর আমি কোনমতেই তোমার নাগাল পাব না— ঠিক যেন আমি ইস্টেশনে হা করে দাড়িয়ে থাকুব, আর তুমি রেলগাড়ির মত বাঁশি বাজিয়ে দিয়ে কোথায় ছুটবে ঠিকানাই পাব না। তোমার নিশ্চয়ই হিমালয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় খুবই ভাল লাগচে। আমাকে দেখেই যেমন ছুটে এসেছিলে তেমনি করেই বোধহয় হিমালয়ের বুকে কঁপিয়ে পড়েছিলে। হিমালয়ের কোলের কাছে ছোট ছোট যে সব ঝরনা কলকল করে ছুটে বেড়াচ্চে, তারা যেমন গিরিরাজের স্নেহের ধন, তুমিও বোধ হয় তেমনি তার আপনার জিনিস হয়ে উঠেচ। ওখানে ঠাণ্ডায় W38