পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে সে করে হুহু করে আমাদের শালবাগানের ডালপালাগুলোর মধ্যে একটা চাপা বেদনা কিছুতেই আর চাপা থাকছে না। ওদিকে দিগন্তের কোণে কোণে রাগী রকমের ক্রকুটি দেখা দিয়েছে— আর তার মধ্যে দিয়ে একটা ফ্যাকাশে আলো দারুণ হাসির মত। সব সুদ্ধ জলে স্থলে খুব একটা ক্ষ্যাপাটে রকমের ভাব। মনে হচ্চে যেন ছুটন্ত উচ্চৈশ্ৰবার [য] উপরে চড়ে ইন্দ্রদেব একটা ঘূর্ণঝড়ের চক্র পৃথিবীর দিকে ছুঁড়ে মেরেচেন। বাতাসের আর্তনাদ আর তার বেগ ক্রমেই বেড়ে উঠচে– একটা রীতিমত ঝড়ের আয়োজন বলেই বোধ হচ্চে। আমার এই দোতলার কোপটি ঝড়ের পক্ষে খুব যে ভাল আশ্রয় তা নয়। আধুনিক কালের যুদ্ধক্ষেত্রের trenchএর মত— যথেষ্ট প্রকাশ্যও নয় যথেষ্ট প্রচ্ছন্নও নয়— ভাল করে ঝড়টা দেখতেও পাচ্চি নে, অথচ ঝড়ের ঝাপট থেকে ভাল করে রক্ষাও পাচ্চিনে। সিড়ির সামনের দরজাটা বন্ধ করতে হয়েচে, ঘরের দরজাও সব বন্ধ— অন্ধকার— কোথা থেকে বেঁকে চুরে একটু বৃষ্টির ঝাপটও আসচে– রুদ্রদেবের তাণ্ডব নৃত্যের এই ডমরুধ্বনির মধ্যে বসে তোমাকে চিঠি লিখচি — সেদিন তুমি আমাকে লিখেছিলে, যে তুমি আমার অনেক নতুন নতুন নাম ঠিক করে রেখেছ। ক্রমে একে একে বোধ হয় শুনতে পাব।— কিন্তু আমার আসল নামটা যেন একেবারে চাপা না পড়ে যায়— কেননা ঐ নামটা নিয়ে এতদিন একরকম কাজ চালিয়ে এসেচি, তা ছাড়া ওর একটা মত্ত সুবিধা এই যে, কবির সঙ্গে রবির একটা মিল আছে— এরপরে যারা আমার নামে কবিতা লিখবে তাদের অনেকটা কষ্ট বাঁচবে। এই জন্যে আমার মনে হয় নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মানুষের একটা কিছু কাজ করা উচিত। মনে কর তুমি যদি খুব গাইয়ে হয়ে উঠতে পার তাহলে প্রীতির সঙ্গে গীতি বেশ মিলে যাবে। কিন্তু আমি তোমার একটা নাম ፄ »