পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিকেলে তোমাকে তাড়াতাড়ি লিখতে বসেছি— ডাক যাবার আগে শেষ করে ফেলতে হবে। আজকাল আর বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই,— আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমার সেই লেখবার কোণটা ত তুমি জান— সেটা হচ্চে পশ্চিমের বারান্দা— সেখানে বিকেলের দিকে হেলে-পড়া সূর্যের সমভ কিরণ বন্ধ-দরজার উপর ঘা দিতে থাকে— সশরীরে ঢুকতে পায় না বটে কিন্তু তার প্রতাপ অনুভব করতে পারি। তুমি এখন যেখানে আছ সেখান থেকে আমার পিঠের দিকের বর্তমান অবস্থা ঠিক আন্দাজ করতে পারবে না। কিন্তু আমার আকাশের মিতাটি আমার সঙ্গে যেমনি ব্যবহার করুন তার সঙ্গে আমার কখনই বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ হয়নি। আমি চিরদিন আলো ভালোবাসি— গাজিপুরে পশ্চিমের গরমেও আমি দুপুর বেলায় আমার ঘরের দরজা বন্ধ করি নি! অনেকদিন বর্ষার আচ্ছাদনের পর সেই আলো পেয়েছি— সেই আলো আজ আমার দেহের মধ্যে মগজের মধ্যে মনের মধ্যে প্রবেশ করচে। আমার সামনে পূৰ্ব্বদিকের ঐ খোলা দরজা দিয়ে ঐ আলো নীল আকাশ থেকে আমার ললাটে এসে পড়চে, আর সবুজ ক্ষেত্রের উপর দিয়ে এসে আমার দুই চোখের সঙ্গে যেন কানে কানে কথা বলচে। পৃথিবীর ইতিহাসে কত হানাহানি কাটাকাটি হয়ে গেল, মানুষের ঘরে ঘরে কত সুখ দুঃখ কত মিলন বিচ্ছেদ কত যাওয়া আসার বিচিত্র লীলা প্রতিদিন বিস্মৃতির মধ্যে মিলিয়ে গেল, কিন্তু এই শরতের নীল আকাশের নিৰ্ম্মল রৌদ্রটি এই শরতের সবুজ পৃথিবীর প্রসারিত অঞ্চলের উপরে যুগে যুগে বর্ষে বর্ষে আপন আসন অধিকার করেছে— কিছুতেই এই সুগভীর শান্তি সৌন্দর্যের পরে এই রসপরিপূর্ণ নিৰ্ম্মলতার উপরে কোনো আঘাত করতে পারে নি। সেই কথা যখন মনে করি তখন সামনের ঐ আকাশের দিকে চেয়ে যুগ যুগান্তরের সেই শাস্তি আমার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত ক্ষোভকে আপন অসীমতার মধ্যে মিশিয়ে নেয়। আমি বুধবারে কি বলি তাই তুমি শুনতে চেয়েচ। যা বলি তা আমার bro