পাতা:চিঠিপত্র (একাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দান যদি ঠিকমত ভাবে গ্রহণ করতে পারি, তার সহযোগে যদি একটা অনুভূতিকে বিশেষ রসে উদবোধিত করা সম্ভব হয় তা হলে কাব্যের যুগযুগান্তর নিয়ে তর্ক করার দরকার হয় না। বেশের বদল করেও যদি কাব্যই আবিভূত হয় তবে তাকে অভ্যর্থনা করতে কুষ্ঠিত হব না। খসড়া’ বইটিতে “হাসপাতাল” ব’লে যে কবিতা বেরিয়েছে তার লেখার ছাদ একেবারেই আমাদের ধরনের নয় কিন্তু তার মধ্যে যে একটি অনুভূতির রহস্যময় ছবি দেখা দিয়েছে তাকে আদর ক’রে মেনে নিতে হবে। কেননা ঠিক এই ছবির বিশেষ রসটা অন্ত কোনো ভঙ্গির মধ্যে প্রকাশ পেতে পারত না । “ঘুম” বলে একটা কবিতা দেখলুম। যে বিষয়বস্তুকে অবলম্বন ক’রে তার অনুভূতি সে আমার কাছে অত্যন্ত নতুন ব’লে ঠেকল। বিশ্বকে কবি বিরাট ঘুমের ভূমিকায় দেখছেন। কালের প্রাঙ্গণে নিখিলের চলাফেরা হচ্ছে কিন্তু তার চৈতন্য নেই। সে যেন একটা চলনশীল ঘুমের মতো। মনে প্রশ্ন ওঠে ঘুম ভাঙবে যখন তখন থাকবে কী। প্রলয় কি রূপহীন গতিহীন শুভ্র শূন্যতা ? ভালো-মন্দর ভেদহার একটা নি:শব্দ না, যার কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই ? মহানিদ্রাসাগরের মধ্যে অসংখ্য রূপের যে-সব আবর্তন দেখা যায় তারা যাচ্ছে তলিয়ে এই ঘুমের অচেতন তলায়। এদিকে অমরতার নানা উপাধি, যা ঘুমের চেয়ে সত্য নয়— উঠছে মেলাচ্ছে লোকালয়ে লোকালয়ে, ইতিহাসের পাতায় পাতায়, যে পাতা কীটে কাটছে নিমেষে নিমেষে। উপাধি মাথায় নিয়ে ৩৬৭