পাতা:চিঠিপত্র (একাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীথিকায় অবিশ্রাম মৰ্ম্মরধ্বনি চলচে, পূবদিকের আমবাগানে তুই কোকিলে সমস্ত দিন কুহু ধ্বনির কবির লড়াই চলেইচে, চষামাঠের মাঝে মাঝে গ্রামগুলি অবগুষ্ঠিতা গ্রামবধুর মত বেণুবনের ছায়ায় ঢাকা দাড়িয়ে আছে, পুকুরপাড়ে ঘটে। একটা গোরু আলস্যমন্থর ভাবে চরে বেড়াচ্চে, বাগানের পাচিলের ধারে নারকেল আর সুপুরি গাছ ঠিক যেন শিশুর মত আকাশের দিকে কেবলি হাত নাড়চে,— আকাশের নীল স্তব্ধ আর পৃথিবীর সবুজ চঞ্চল, এই উভয়ের মধ্যে দিনরাত কেবলি রঙের ইসারা চলচে, দিনগুলো খেলার নৌকোর মত কেবলমাত্র পাখীর গান, কনকচাপার গন্ধ, বেণুবনের মৰ্ম্মর আর আলোছায়ার ঝিকিমিকি বোঝাই হয়ে আকাশের পূর্বঘাট থেকে পশ্চিমঘাটে পারাপার করচে– সবই তেমনি আছে কেবল আমার চিরপরিচিত পদ্মা শিলাইদা ছেড়ে দূরে কোথায় চলে গেছে তার অার নাগাল পাবার জো নেই। আমার পক্ষে এই বিচ্ছেদটি সামান্ত নয়— যেন অলকাপুরীতে ঐশ্বৰ্য্য সবই আছে কেবল স্বয়ং লক্ষ্মীই নেই— সোনার নুপুরগুলি রয়েচে পড়ে, মুরজমুরলী মৃদঙ্গ কিছুরই অভাব নেই, কেবল যে পা দুখানি নিরস্তর নৃত্য করে বেড়াত তারাই গেছে কোথায় চলে। যেখান থেকে কিছুদিনের জন্যেও চলে যাই ঠিক সেখানটিতে কিছুতেই আর পৌছতে পারিনে— রেলের ষ্টেশন ঠিক আছে, রেলগাড়িও চলচে কিন্তু আসল জায়গাটি লুকিয়ে লুকিয়ে কোথায় যে সরে যায় তার ঠিকানা পাবার জো থাকেন । ২৯