পাতা:চিঠিপত্র (একাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবকাশে লোকালয়ের আভাস দেখা যায়। নারকেলগাছগুলি মেঘমুক্ত আকাশের দিকে পাতার অঞ্জলি তুলে ধরে সূৰ্য্যালোক পান করচে । এখান থেকে বিদায় নেবার মুহূৰ্ত্তে মনে মনে ভাবচি দ্বীপটি সুন্দর, এখানকার লোকগুলিও ভালো তবুও মন এখানে বাসা বাধতে চায় না। সাগর পার হয়ে ভারতবর্ষের আহবান মনে এসে পেচচ্ছে। শিশুকাল থেকে ভারতবর্ষের ভিতর দিয়েই বিশ্বের পরিচয় পেয়েচি বলেই যে এমন হয় তা নয়,— ভারতবর্ষের আকাশে বাতাসে আলোতে নদীতে প্রান্তরে প্রকৃতির একটি উদারতা দেখেচি, চিরদিনের মতো আমার মন তাতে ভুলেচে। সেখানে বেদন অনেক পাই, লোকালয়ে দুৰ্গতির মূৰ্ত্তি চার দিকে— তবু সমস্তকে অতিক্রম করে সেখানকার আকাশে অনাদিকালের যে কণ্ঠধ্বনি শুনতে পাই তাতে একটি বৃহৎ মুক্তির আশ্বাস পাই। ভারতবর্ষের নীচের দিকে ক্ষুদ্রতার বন্ধন, তুচ্ছতার কোলাহল, হীনতার বিড়ম্বনা যত বেশি এমন আর কোথাও দেখি নি তেমনি উপরের দিকে সেখানে বিরাটের আসনবেদী, অপরিসীমের অবারিত আমন্ত্রণ। অতি দূরকালের তপোবনের ওঙ্কার ধ্বনি এখনো সেখানকার আকাশে যেন নিত্য-নিস্বসিত। তাই আমার মনের কাছে আজকের এই প্রশান্ত প্রভাত সেই দিকেই তার আলোকের ইঙ্গিত প্রসারিত করে রয়েচে । ইতি ৮ই সেপ্টেম্বর ১৯২৭ স্নেহানুরক্ত শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর \99