পাতা:চিঠিপত্র (চতুর্দশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের সঙ্গে পরিচয় হবার সৌভাগ্য আমার হয়। একদিন সন্ধ্যার সময় আমি মজুমদার লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখি পাশের ঘরে রবিবাবু ব’সে আছেন। আমি লাইব্রেরী ঘরে বসলাম, এবং রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য লাভে ভাগ্যবান লোকদের ঈর্ষ্যার দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম। একটু পরেই স্থবোধ মজুমদার লাইব্রেরী ঘরে এলেন, এবং আলমারী থেকে রবিবাবুর 'কাহিনী’ বইখানি বাহির ক’রে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে কুষ্ঠার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম “স্ববোধবাবু, এ বই কি হবে ?” তিনি বললেন– “রবিবাবুকে দিয়ে পতিতা’ কবিতাট পড়াব।” আমি অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে নিতান্ত সঙ্কোচ ও কুষ্ঠার সহিত র্তাকে বললাম— “স্ববোধবাবু, আমি যাব ?” তিনি বললেন-- “আস্থান না ।” অামি কৃতাৰ্থ হ’য়ে সেই ঘরে গেলাম । অপরিচিত আমাকে যেতে দেখে রবিবাবুর মুখে একটি লাজুক হাসি ফুঠে উঠল, এবং তার মুখ অপ্রতিভ হয়ে উটুল। পতিতা’ কবিতাটি পড়বার কথা আগেই স্থির হয়ে ছিল। কিন্তু অপরিচিত আমার সামনে ‘পতিতা সম্বন্ধে কবিতা পড়তে র্তার লজ্জা বোধ হচ্ছে ব’লে আমার মনে হলো । তিনি মাথা নত ক’রে নতনেত্রের উধ্ব দৃষ্টি আমার মুখের দিকে প্রেরণ ক’রে বলতে লাগলেন– “এ কবিতাটা কি বোঝা যায় ?” আমি বললাম, “বোঝা যাবে না কেন ? এ কবিতা তো চমৎকার !” তখন বুঝি নি যে রবিবাবু আমার মতের জন্য ঐ কথা বলেন নি, তিনি কবিতা পাঠের ভূমিকা স্বরূপ নিজের কাছেই নিজে ঐ কথা বলতে আরম্ভ করেছেন। তিনি আমার কথা কানে না তুলেই নিজের মনে ব’লে যেতে লাগলেন– “আমি এই কবিতায় বলতে চেয়েছি— রমণী পুষ্পতুল্য— তাকে ভোগে ও পুজায় নিয়োগ করা যেতে পারে । তাতে যে কদৰ্যতা বা মাধুর্য প্রকাশ পায় তা ফুলকে বা রমণীকে স্পর্শ করে না,— রমণী বা ফুল চির-অনাবিল,— তাতে ফুল বা রমণীর কোনো ইচ্ছা মান হয় না ব’লে সে ভোগে বা পূজায় নিয়োজিত হয়, তাতে নিয়োগকর্তার মনের কদর্যতা বা > SS