পাতা:চিঠিপত্র (চতুর্দশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নেবো ভাবছি, এমন সময় আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভদ্রলোক সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । আমার যাও ক্ষীণ আশা ছিল, তাও আর রইল না, আমার স্থির ধারণ হলো যে আর আমার কোনো প্রশংসাপত্র পাওয়ার পথ খোলা রইল না । * কবি তৎক্ষণাৎ উঠে পড়লেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে গেলেন—“চারু, তোমরা বোসো, আমার এক জায়গায় নিমন্ত্রণ আছে, আমাকে কাপড় বদলে এখনি বেরুতে হবে।” অল্পক্ষণ পরেই কবি কাপড় বদলে আলখাল্ল| প’রে ফিরে এলেন । সি”ড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে আমার সঙ্গে চোখোচোথি হওয়াতে তিনি চোখের ইসারায় আমাকে তার অনুসরণ ক’রে যেতে বললেন । আমি উঠে বেরিয়ে পড়লাম, এবং কবির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মোটরে চড়ে রওনা হলাম— কোথায় তা তখনো জানি না । মোটর জোড়াশাকে থেকে নিষ্ক্রাস্ত হয়ে গেলে তিনি শোফারকে আদেশ করলেন গাড়ি বিশ্বভারতীর আপিসে নিয়ে যেতে । সেখানে গিয়ে কবি আমার জন্য সুপারিশ ক’রে ভাইস চ্যান্সেলার হার্টগ সাহেবকে এক পত্র লিখে দিলেন, তাতে আমাকে যে প্রশংসা করলেন তা আমার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল । সেই পত্র আমার হাতে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন—“দেখে তো, হবে ?” আমার মন আনন্দে এমন পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল যে আমি কথা বলতে পারলাম না। তখন কবি আমাকে বললেন—“দেখ চারু, তোমার জন্যে আমি আজ যা করলাম ত আমার অতি নিকট কোনো আত্মীয়ের জন্যেও করতাম না।” কবীন্দ্রের সেই পত্রের প্রশংসার জোরেই এখানে আমার চাকরী হ’য়ে গেল এবং সেই চাকরী আমি এখনো করছি। কবি-মানুষটিরই পরিচয় বিস্তৃত হয়ে পড়ল। কবি-মানসের পরিচয় দেবার আর স্থান নেই। শুধু তার কবিমনের কয়েকটি লক্ষণের উল্লেখ ক’রেই আমার প্রসঙ্গ সমাপ্ত করব। ર૭૨