পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দীনেশচন্দ্র সেন
৩ নভেম্বর ১৮৬৬ - ২০ নভেম্বর ১৯৩৯

 আমি আমার যমজ ভগিনী মগ্নময়ী দেবীকে সঙ্গে লইয়া মাতুলালয় [ঢাকা জেলার] বগজুড়ী গ্রামে এক আম্রবৃক্ষতলে আতুড় ঘরে অবতীর্ণ হইয়াছিলাম। কার্তিক মাসের ১৭ই, শক ১৭৮৮ শুক্রবার রাত্রি তখন ৪ দণ্ড বাকি আছে।

 আমার পিতৃদেব ঈশ্বরচন্দ্র সেন ১৮২৫ খৃষ্টাব্দে সুয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

 ...ইংরেজি শিক্ষার ফলে যাহা হইত তাঁহার তাহাই হইল, তিনি নব ব্রাহ্মমতের পক্ষপাতী হইয়া পড়িলেন।

 ...ঢাকা জেলা কোর্টের সরকারী উকিল গোকুলকৃষ্ণ মুন্সী মহাশয় তাঁহার কন্যা রূপলতা দেবীকে ইহার সঙ্গে বিবাহ দেন; তখন আমার পিতার বয়স ১৫/১৬।

 ...পাঁচ বছর বয়সে যথারীতি হাতে খড়ি হওয়ার পর আমি সুয়াপুর গ্রামে বিশ্বম্ভর সাহার পাঠশালায় লেখাপড়া করিতে সুরু করিয়া দেই।...

 বিশ্বম্ভরের পাঠশালায় চারুপাঠ দ্বিতীয় ভাগ পর্যন্ত পড়া শেষ করিয়া আমি মাণিকগঞ্জ মাইনর স্কুলে ভর্তি হইলাম। ...[হেডমাষ্টার পূর্ণচন্দ্র সেনের] কাছে ইংরেজি প্রথম শিখিয়াছিলাম। ...আমি তাঁহার কাছে বিছাপতি চণ্ডীদাসের পদের ব্যাখ্যা প্রথম শুনিয়াছিলাম।

 ...আমার সাহিত্য-জীবন অতি শৈশবেই আরদ্ধ হইয়াছিল। যখন আমার সাত বৎসর বয়স, তখন আমি পয়ার ছন্দে সরস্বতীর এক স্তব লিখিয়াছিলাম। তৎপর কত যে কবিতা লিখিয়াছি, তাহার ইয়ত্তা ছিল না।

 ...দিদি মুক্তালতাবলী পড়িয়া শুনাইতেন। মুক্তা না দেওয়াতে ক্রুদ্ধ কৃষ্ণ মায়াপুরী নির্মাণ করিয়া বিরহী রাধার স্পর্ধা ভাঙিয়া দিয়াছিলেন। স্বর্ণবেত্র হস্তে রাধার অপেক্ষা রূপলাবণ্যশীলা রাজকুমারীরা নিথর রাত্রিতে তাঁহাকে গঞ্জনা ও ঠাট্টা করিয়া অনুতাপ বাড়াইয়া দিয়াছিলেন। সেগুলি দিদি এমনই

৭৩