পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করুণ কণ্ঠে সুর করিয়া পড়িতেন যেন আমার চক্ষে ছবির পর ছবি ফুটিয়া উঠিত। রাধার দুঃখে শিশুহৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইত। সেই স্মৃতি হইতে ৪২ বৎসর পরে আমি গত বৎসর ‘মুক্তাচুরি’ [প্রথম প্রকাশ ১৪ এপ্রিল ১৯২০] বহি লিখিয়াছিলাম।

 তার পর মাইনর ক্লাসে উঠিয়া আমি বাইরণের ‘চাইল্ড হেরল্‌ড’ ও ‘ডন জুয়ান’ প্রভৃতি পাঠ করি। সকলাংশ না বুঝিলেও যেটুকু বুঝিতাম তাহাতে আমার কল্পনা আমাকে অনেক দূর লইয়া যাইত। আমি খাতার পর খাতা পূর্ণ করিয়া কবিতা লিখিয়া তৃপ্তি বোধ করিতাম।

 ...যখন সেকেণ্ড ইয়ার ক্লাসে পড়ি তখন একটা নোটবুকে এই মর্মে লিখিয়াছিলাম “বাঙ্গালার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হইব— যদি না পারি তবে ঐতিহাসিক হইব। যদি কবি হওয়া প্রতিভায় না কুলোয়, তবে ঐতিহাসিকের পরিশ্রমলব্ধ প্রতিষ্ঠা হইতে আমায় বঞ্চিত করে, কার সাধ্য?”

 ...কাব্যানুরাগ দিদি দিগ্বসনী দেবী আমায় দান করিয়াছিলেন। তিনি যখন বৈষ্ণবপদ মৃদু স্বরে গাহিতে থাকিতেন, তখন আমার মনে যে আনন্দ হইত তাহা শুধু অশ্রুজলপ্লাবিত হইয়া ভাসিয়া যাইত না, তাহা আমার কল্পনার ঘরে আরতির ঘিয়ের বাতি জ্বালাইয়া দিত।

 ...ক্লাসে এবং পরীক্ষার ফল সম্পর্কে আমার খ্যাতি যে রূপই থাকুক, ঢাকা ছাত্রসমাজে শীঘ্রই সকলে জানিতে পারিল— আমি ইংরেজি কবিতা ও বৈষ্ণব-পদ ইত্যাদি এত পড়িয়া ফেলিয়াছি যে কেহই আমার সঙ্গে এই সকল বিষয়ে আঁটিয়া উঠিতে পারিত না।

 ...ঢাকার বাসায় আমাদের পড়িবার আড্ডাটা কম জমকালো ছিল না। বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের আমরা যেরূপ চর্চা করিয়াছি সেকালের ছাত্রদের মধ্যে কেউ সেরূপ করে নাই।

 ...আমি যখন প্রথম বার্ষিক শ্রেণীতে পড়ি তখন অক্ষয় সরকারের 'নবজীবন' প্রথম প্রকাশিত হয়। সে বোধ হয় ১৮৮৩ [১৮৮৪] সন হইবে। সেই বৎসরই আমার একটা কবিতা ‘পূজার কুসুম’ নবজীবনে প্রকাশিত হয়।

 ...ইংরেজি সাহিত্যের একখানি ইতিহাস ভারতীয় আদর্শের মাপ-কাঠিতে বিচার করিয়া বাঙ্গালা ভাষার লিখিতে শুরু করিব, এই সংকল্প করিতেছিলাম,

৭৪