পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আইসক্রীম পৌছবার পূর্বেই যে জোড়ার্সাকো থেকে অকস্মাৎ আমার তিরোভাব ঘটল নিশ্চিত এর মধ্যে মধুসূদনের হাত আছে। শ্ৰীপতি স্লেচ্ছজনসেবিত উক্ত ভোজ্য পদার্থের রচনানৈপুণ্য নিয়ে দর্প প্রকাশ করেছিল, দর্পহারী আমাকে তাড়াতাড়ি তাই বিকেলের ট্রেণেই বোলপুরে রওনা করে দিলেন– অতএব এক্ষণে মধুসূদনের সঙ্গেই শ্ৰীপতি নিষ্পত্তি করে নিক। চিঠি শ্ৰীপতি যদি না পেয়ে থাকে তাহলে পুলিসে হয়ত তার বদনাম আছে— চিঠি বিলুপ্তি আজকালকার দিনের ইতিহাসেরই একটা অঙ্গ । কে বলে তুমি আমাকে ঘরের কথা লেখ ? ঘরের লোক ছাড়া কাউকে ঘরের কথা লেখাই যায় না । আমি যে-ঘরকে কিছুই জানি নে সে ঘরে তো আমার দরোজা বন্ধ । তোমার ভাষা দিয়ে তৈরি ঘরে তো পর্দা খাটানো নেই, তার ফোটোগ্রাফ নেওয়া যদি চলত তাহলে দেখতে ও একটা স্বতন্ত্র জিনিষ। কেননা ও ঘর তো আমিই মনে মনে তৈরি করে নিই, কোনো সৃষ্ট পদার্থের সঙ্গে ঠিকমতে ওর মিল হতেই পারে না । তুমি যে নামগুলি ব্যবহার কর সে তোমার চেনা, কিন্তু নামের পিছনকার রূপ তো আমারই তৈরি । তুমি ডাকঘরের আড়ালে দাড়িয়ে যা-খুসি গল্প বলে যেয়ে, তাতে কারো এতটুকু আব্রু নষ্ট হবে না — আমার মন খুসি হবে চিঠিতে এরকম বকে যাওয়া একটা বিশেষ বিদ্যা, সবাই পারে না, তুমি পারে। সহজ কথা সহজে বলার শক্তি খুবই দুর্লভ। আপন ভাষা সকলের আপন আয়ত্তে নেই। ইতি ১৮ অগ্রহায়ণ ১৩৩৮ দাদা