পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করেছিলেন, কিন্তু হতভাগা মহিষ পশুটা কী দোষ করেছে ? কিন্তু মহিষের রক্তে দেবী প্রসন্ন হন এই কল্পনা করে যারা পূজা করে তাদের পূজা কি পূজা, না দেবতার অবমাননা ? বোলপুরের কাছে কঙ্কালীতলা বলে এক তীর্থে বৎসরে একবার বিশেষ পরবে নানা ভক্তের মানৎরূপে বহু শত পাঠার বলিদান হয়, নিকটের জলাশয় রক্তে লাল হয়ে ওঠে । এই লুব্ধ হিংস্রতাকে যদি পূজা নাম দিতে কুণ্ঠ না হয় তাহলে পাণ্ডার পা পূজাকেও ভক্তি নাম দিতে পার। ভক্তিকে রিপুর দলে ফেলো না । এমন কি ভক্তি দেখিয়ে দেবতার প্রসন্নতা লাভ করা যায় এ মনে করাতেও ভক্তির খৰ্ব্বতা করা হয় । ভক্তি যে করে ভক্তিতে তারই চরিতার্থতা । আচার অনুষ্ঠানের দ্বারা পুণ্য হয় এও আধ্যাত্মিকতার নামে স্কুল বৈষয়িকতা । পুণ্য অন্তরের সামগ্রী, এবং সে পুণ্যে পারত্রিক সদগতির কথাও স্থল বস্তুতন্ত্রতা । আমাদের দেশে পুণ্যকে পণ্যসামগ্রী কবে তুলেছে—দেশ পায়ের ধূলো বিক্রি করে লোভদের কাছে — আচারের অনর্থক উপকরণ বাহ পদার্থ, হাটে নানা নামে তাদের বেচাকেনা চলে ; একদা মণিকণিকা ঘাটে স্নানের পরে আমাকে তিলকচচ্চিত করে যে মানুষ মূল্য নিয়েছিল পুণ্যকে এতদূর শস্ত করার দ্বারা সে মনুষ্যত্বের যে অবমাননা করে থাকে সেই দুৰ্গতির ভারেই ভারতবর্ষের মাথা আজ হেঁট হয়ে গেছে — এই পৰ্য্যন্তই থাক। তর্ক করে কোনো লাভ নেই । ইতি ৫ অগ্রহায়ণ ১৩৪১ দাদ। Š ፃ 8