পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্ষণশীলদিগকে পড়তে বলি এবং আপনাকে বারংবার খোচা দিয়ে দিয়ে চিঠি আদায় করি। আমি চাই যে, প্রাচীন ও নব্য ভারত তর্ক দ্বারাই হোক বা যেরূপেই হোক, একটা মীমাংসায় আসুক। পণ্ডিতেরা যা’ বলবেন তারি অনুমান করে? আমি আপনাকে বলি। কিন্তু, দাম্ভিক পণ্ডিত ধারা তারা তর্কই করবেন না, বলবেন, “স্মৃতির বাইরের কারু সঙ্গে স্মৃতির বিচার কেন করব ?” কিন্তু, এ দম্ভ অসার । আমি প্রাচীন ভারত বলতে মাত্র স্মাৰ্ত্ত ভারতকে লক্ষ্য করে বলছি— কলির পূর্ব যুগের ভারতকে নয়। যদি উপায় থাকৃত, আমার কাছে যে সব চিঠি আপনি লেখেন, তা আশ্রমকে দেখাতাম । কিন্তু, নিরুপায় । তারা গণ্ডীর বাইরের কোনো জিনিষ চোখে দেখতেও চাইবেন না । আমি যে ঘরে বাইরে দোষী হয়েও এ সব চিঠি লিখছি আর চিঠি আদায় করছি, নব্য ভারত এর থেকে তার পথ চিনে নেবে । আমার উপকার না হোক, আমার দেশের আর সকলে উপকৃত হতে পারবে । স্বতরাং আমার তর্ক দেখে আপনি আর কিছু মনে করবেন না। যদি আমি পণ্ডিত হ’তাম, বুদ্ধি করে তর্ক করতাম । আমার ক্ষুদ্র মাথায় যা আসছে, তাই বলছি মাত্র । আমি স্মৃতিশাস্ত্র মোটেই আলোচনা করি নি— মা ছেলেবেলায় উনবিংশতি সংহিতা প্রভৃতি একবার পড়তে দিয়েছিলেন, সে মনেও নেই। এটুকু মনে আছে যে, স্মৃতিসংহিতার বিধান আমাদের দেশাচার লোকাচারের নীচে চাপ৷ পড়ে গেছে— আমরা ঠিক মনুর শিষ্য নই। . . আমি আপনাকে মানি, তাই আপনার সঙ্গে এত তর্ক করি । আপনি আমাদের হিন্দুসমাজের নাড়ীনক্ষত্র জগমেন, আপনার কথার দাম আছে— এবং আপনার বিধান মেনেই বাংলার ছেলেরা চলছে— অবশ্য আপনার সদুপদেশগুলো বাদ দিয়ে। কেননা, আপনি পরমাত্মা মানেন, উপনিষদ মানেন, সাধনা মানেন, সংযম মানেন, ওরা তার ধার দিয়েও যায় না । 8 * о