পাতা:চিঠিপত্র (পঞ্চম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র ১৩১ করেছ তার সঙ্গে বোলপুরের “প্রাকৃতিক ভূগোলে’র অনেক সাদৃশু আছে। চারদিকে মাঠ ধুধু করচে– মাঝে মাঝে এক-একটা বাধ, এবং তার উচু পাড়ের উপর শ্রেণীবদ্ধ তালবন— মাঠের পূর্বপ্রান্তে আকাশ একেবারে অনাবৃত ভূমিতলকে স্পর্শ করে রয়েছে— মাঠের পশ্চিম প্রান্তে ঘনবনের রেখা দেখা যায়। মধ্যেকার এই মরুক্ষেত্র অনশনশীর্ণ পাণ্ডুবর্ণ তৃণে আচ্ছন্ন, মাঝে মাঝে একএকটা নিতান্ত খৰ্ব্বাকার খেজুরের ঝোপ— মাঝে মাঝে মাটি দগ্ধ হয়ে কালো হয়ে কঠিন হয়ে পৃথিবীর কঙ্কালের মতো বেরিয়ে রয়েছে। উত্তরদিকের মাঠ বর্ষার জলস্রোতে নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে লিলিপটুদেশীয় ক্ষুদ্রকায় গিরিশ্রেণীর আকার ধারণ করেছে— সেই ছোট ছোট রক্তবর্ণ কঠিন মৃত্তিকার স্ত,প নানা রকম পাথরের টুকরো ও কাকরে আবৃত— তাতে ছোট ছোট বুনো জাম ; বেঁটে খেজুর এবং অখ্যাতনাম! তুই এক রমকের গুল্ম অত্যন্ত বিরলভাবে শোভা পাচ্চে— তারি মধ্যে মধ্যে ঝরণা এবং জলস্রোতের শুষ্ক রেখা দেখা যায়— শরৎকালে সেইগুলো পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ছোট ছোট মাছ তাতে খেলা করে। এই মরুভূমির মাঝখানে আমাদের বাগানটি গাছে ছায়ায় ফলে ফুলে আচ্ছন্ন হয়ে, পাখীর গানে মুখরিত হয়ে, তরুপল্লবের অন্তরাল হতে দৃশ্বাগ্রশিখর প্রাসাদের দ্বারা মুকুটিত হয়ে নিভৃতমহিমায় বিরাজ করচে। এই বোলপুরের বাগান আমাদের ভারি ভাল লাগে । ছেলেবেলায় আরো ভাল লাগ ত । বোধ হয় এখনকার ভাললাগার মধ্যে তারি সেই “রেশপ্ত রয়ে গেছে ।