পাতা:চিঠিপত্র (পঞ্চম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিঠিপত্র ማዊ আর কী চাই। মৃত্যু কি এর চেয়েও বড়ো যে ভাবনা করতে হবে। সাধকের বলেচেন দুঃখ থেকে মুক্তি পাবার জন্তে হওয়াটাকেই সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে— কিন্তু আমি বলি হওয়াটাই যদি মিটুল তবে দুঃখটা গেল কি না গেল তাতে কি আসে যায়। রুগী বলচে, কব রেজমশায়, জর ছাড়াও— কবিরাজ মস্ত নিয়ে বললেন দেহ ত্যাগ করলে জ্বরের উৎপাত একেবারে ঘুচবে। রুগীর বক্তব্য এই যে দেহটার জন্যেই জ্বরের অবসান কামনা করা, দেহটারই অবসান যদি একমাত্র উপায় হয় তাহলে জরটা না হয় রইল। আমি আছি এইটে হোল শেষ কথা, এটাকেও শেষ করলে বাকি রইল কি ? মৃত্যুতে ওটা শেষ হয় কি না হয় জানিনে, কিন্তু বেঁচে থাকতে থাকতেই যে সব সন্ন্যাসী ওটাকে কেবলি রগড়ে মুছে ফেলবার চেষ্টায় লেগে থাকে তাদের সঙ্গে কোনোদিন আমার বনিবনাও হোলে৷ না। জীবনে কঠিন দুঃখ পেয়েছি এবং নিবিড় সুখ । কিন্তু সেই দুঃখে আমার হওয়াটাকেই তীব্র করে প্রমাণ করেচে, অতএব তাকে নিন্দে করৰ না । বিছানায় পড়ে পড়ে এই সব কথা ভেবেচি । আরো একটা কথা ভেবেচি। দেশের কাজ করব বলে একদিন কোমর বেঁধে লেগেছিলেম। দেহের দিকে তাকাইনি, তহবিলের দিকে তাকাইনি, আরামের দিকে না, অবকাশের দিকে না— নিজের ঘরকন্নাকে একরকম ছন্ন ছন্ন করেছি সে তোরা জানিস। যাকে বলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো । স্বদেশে অতি সব অযোগ্য লোকের দ্বারে দ্বারে ফিরেচি