পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বোট চলবার কুল্‌কুল্ শব্দ। এরি উপরে যখন ক্ষীণ জ্যোৎস্না এসে পড়ে তখন মনে হয় যেন কোন্ একটা জনহীন মৃত্যুলোকের মধ্যে আছি। আমি বাতি নিবিয়ে দিয়ে জানলার কাছে কেদারা টেনে নিয়ে জ্যোৎস্নায় চুপচাপ্ করে বসে থাকি— এই বিশাল জলরাশির সমস্ত শান্তি আমার হৃদয়ের উপর আবিষ্ট হয়ে আসে। পর্শু দিন এই বিলের মধ্যে হঠাৎ পশ্চিমে ঘন মেঘ করে একটা ঝড় এসে পড়ল— বোটটা ভাগ্যক্রমে তখন একটা ধানের ক্ষেতের মধ্যে ছিল তাই তাড়াতাড়ি নোঙর ফেলে কোনমতে জলের তলার মাটি আঁকড়ে রইল। ঝড় ছেড়ে গেলে বোট ছেড়ে দিলুম— কিন্তু অদৃষ্ট এমনি খানিকটা গিয়েই আবার হঠাৎ ঝড়— সেবারেও দৈবক্রমে সুবিধার জায়গায় ছিলুম। নইলে বোট বাতাসে কোথায় ঠেলে নিয়ে ফেল্‌ত তার ঠিকানা নেই। এখানে এসেই খবর পেলুম আস্‌চে সোমবারেই আমাকে হাইকোর্টে হাজুরি দিতে যেতে হবে— সুতরাং কালই আমাকে ছাড়তে হবে। কলকাতার শত সহস্র গোলমালের মধ্যে তোমাকে চিঠিপত্র লেখবার অবসর পাওয়া শক্ত তাই আজ এখানে বসেই তোমাকে লিখ্‌চি। এ ক’দিন জলের মধ্যে পরিপূর্ণ শান্তির মধ্যে সম্পূর্ণ নির্জনতার মধ্যে নিঃশব্দে বাস করে আমার শরীরের অনেক উপকার হয়েছে। আমি বুঝেছি আমার হতভাগা ভাঙা শরীরটা শোধরাতে গেলে একলা জলের উপর আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আমার আর অন্য উপায় নেই। লিখ্‌তে লিখ্‌তে আবার একটা ঝড় এসে পড়ল— তপ্‌সী

৬৭