পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেখানে মজলিস বসত । চা-পান তখন চলন হয় নি। মা নানারকম মিষ্টান্ন করতে পারতেন, ঘরে যেদিন যা তৈরি করতেন সকলকে তাই বিতরণ করতেন । গ্রীষ্মকালে সেইসঙ্গে থাকত আমপোড়া শরবত ••• বাবাদের ‘খামখেয়ালী সভা যখন আরম্ভ হয় তখন আমি একটু বড়ো হয়েছি । তাই এই বৈঠকের বিষয় স্পষ্ট মনে আছে। এই সভার কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না। পনেরো-কুড়িজন বন্ধুবান্ধব ১ মিলে এই সভা । বাবা ও বলুদাদার উৎসাহে এর প্রতিষ্ঠা হয় । সভ্যশ্রেণীভুক্ত হবার কোনো নিয়ম না থাকলেও, লেখক কবি শিল্পী সংগীতজ্ঞ ও অভিনেতাদের নিয়েই সভা গঠিত হয় ... সভার প্রথা দাড়িয়ে গিয়েছিল— প্রতি মাসে একএকজন সভ্য পালা করে তার বাড়িতে অন্য সকলকে নিমন্ত্রণ করতেন। সেদিন সেখানেই বৈঠক বসত। যদিও আহারের প্রচুর আয়োজন থাকত— কিন্তু সেটা উপলক্ষ মাত্র | কবিতা বা গল্প পড়া, ছোটোখাটো অভিনয় ও গানবাজনা করা এই ছিল প্রধান উদ্দেশু। বাবার যেবার নিমন্ত্রণ করার পালা পড়ল, বাড়িতে হুলুস্কুল পড়ে গেল। মাকে ফরমাস দিলেন খাওয়ানোর সম্পূর্ণ নতুন রকম ব্যবস্থা করতে হবে। মামুলী কিছুই থাকবে না, প্রত্যেকটি পদের বৈশিষ্ট্য থাকা চাই । ফরমাস করেই নিশ্চিন্ত হলেন না, নতুন ধরনের রান্না কী করে রাধতে হবে তাও বলে দিতে লাগলেন। মা বিপদে পড়লেন । তিনি প্রতিবাদ না করে নিজের মতে ব্যবস্থা করতে লাগলেন । বাবা মনে করতেন, খাওয়াটা উপলক্ষ মাত্র, রান্না ভালো হলেই হল না— খাবার পাত্র, পরিবেশনের প্রণালী, ঘর সাজানো সবই সুন্দর হওয়া চাই । যেখানে খাওয়ানো হবে ১ নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রিয়নাথ সেন, চিত্তরঞ্জন দাশ, অক্ষয় চৌধুরী, প্রমথ চৌধুরী, সন্তোষের প্রমথনাথ রায়চৌধুরী, অতুলপ্রসাদ সেন প্রভৃতি । > QWり