পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুড়ি ও গলায় একটি চেন ছাড়া তার কোনো গয়ন অবশিষ্ট ছিল না। মা পেয়েছিলেন প্রচুর, বিবাহের যৌতুক ছাড়াও শাশুড়ির পুরানো আমলের ভারী গয়না ছিল অনেক ! শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের খরচ জোগাতে সব অন্তর্ধান হল । বাবার নিজের যা-কিছু মূল্যবান সম্পত্তি ছিল তা আগেই তিনি বেচে দিয়েছিলেন । যে বিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটা তার সাময়িক শখের জিনিস ছিল না । বহুদিন ধরে যে-শিক্ষার আদর্শ র্তার মনের মধ্যে কল্পনার আকারে ছিল তাকেই রূপ দিতে চেয়েছিলেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে । তিনি কেবল আদর্শবাদী ছিলেন না, আদর্শকে রূপায়িত না করতে পারলে তার তৃপ্তি ছিল না। তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা, যতই তা কঠিন হোক-না কেন, তিনি যথেষ্ট মনে করতেন না । সেই ত্যাগ স্বীকারে মা তার অংশ স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করেছিলেন । আমাদের আত্মীয়ের মাকে এইজন্ত ভংসনা করতেন, বাবাকে তো তারা কাণ্ডজ্ঞানহীন অবিবেচক মনে করতেন । বহুকাল পর্যন্ত বাবাকে, আর মা যতদিন বেঁচেছিলেন তাকে, বাড়ির লোকদের কাছ থেকে বিদ্যালয় সম্পর্কে বিদ্রুপ ও বিরুদ্ধতা সহ্য করতে হয়েছিল । শান্তিনিকেতনে কয়েক মাস থাকার পর মায়ের শরীর খারাপ হতে থাকল। যখন নিতান্তই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন তাকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হল । বাবা তখন কলকাতায়, দাদা দ্বিপেন্দ্রনাথকে লিখলেন মাকে নিয়ে কলকাতায় আসতে । বোলপুর থেকে কলকাতায় মাকে নিয়ে সেই যে যাওয়া— আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে একটি সামান্ত কারণে । মা শুয়ে আছেন, আমি তার পাশে বসে জানলা দিয়ে একদৃষ্ঠে দেখছি— কত তালগাছের শ্রেণী, কত বুনো খেজুরের ঝোপ, কত বঁাশঝাড়ে ঘেরা গ্রামের পর গ্রাম, কখনো চোখে পড়ল মস্তবড়ো মহিষের পিঠে নিৰ্ভয়ে বসে আছে এক বাচ্চ ছেলে— এই-সব গ্রাম্য দৃশু চোখের সামনে দিয়ে সিনেমার ছবির মতো চলে যাচ্ছে । ১৬২