পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চেপে রয়েছে, কাজের অন্ত নেই । তখন নিজের সুখদুঃখকে কেন্দ্ৰ ক’রে মনকে আবদ্ধ করবার অবসরই বা কোথায় । মেজো মেয়ে মৃত্যুশয্যায় আলমোড়ায় । তাকে ফেলেও বারে বারে আসতে হ’ত শান্তিনিকেতনের কাজে । যাওয়া আসা ছুটোছুটি চলছেই। তবে সবচেয়ে কি কষ্ট হ’ত জানো, যে এমন কেউ নেই যাকে সব বলা যায় । সংসারে কথার পুঞ্জ অনবরত জমে উঠতে থাকে. ঠিক পরামর্শ নেবার জন্য নয়, শুধু বলা, বলার জন্তই। এমন কাউকে পেতে ইচ্ছে করে যাকে সব বলা যায়,... সে তো আর যাকে তাকে হয় না । যখন জীবনের এই যুদ্ধ চলেছে, কাজের বোঝা জমে উঠছে, মেয়ে মৃত্যুর পথে অগ্রসর হচ্ছে, তখন সেইটেই সব চেয়ে কষ্ট হ’ত যে এমন কেউ নেই যাকে সব বলা [ যায় ].* মৃণালিনী দেবী যখন মৃত্যুশয্যায়, আসন্ন আঘাতের উদবেগে ও শঙ্কায় কবিচিত্ত ভিতরে ভিতরে মথিত ও উর্দুবেল। অসাধারণ সংযম ও পৌরুষ কিভাবে রবীন্দ্রনাথ রক্ষা করিয়াছেন তাহার চিত্র পাওয়া যায় কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী -লিখিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য গ্রন্থে, প্রাসঙ্গিক অংশ তাহা হইতে সংকলিত হইল : “এইবারে কবির ব্যক্তিগত উদারতা ও অন্তরের দিকৃটা, সে সময় যেমন দেখিয়াছি, তাহাই বলিবার চেষ্টা করিব । প্রতিভার মত সেদিকটাও আমার হৃদয়স্পর্শ করিয়াছিল । কবির পত্নী-বিয়োগের দিন ঘটনাচক্রে আমি তাহার গৃহে উপস্থিত ছিলাম। আসন্নমুতু্য রোগীর বাড়ী, সহসা একবার উপস্থিত হইলে তৎক্ষণাৎ সেখান হইতে চলিয়া আসা আমাদের বাঙ্গালী জাতির বিচারে শিষ্টাচার-সঙ্গত নয় । তাহার উপর, কবির সহিত আমার তখন যে সম্বন্ধ, তাহাতে রোগিণীর ঐ অবস্থা দেখিয়া ফিরিয়া আসা আদৌ সম্ভবপর ছিল না । সমস্ত সকাল বেলাটাই সেখানে বসিয়া সময়োচিত নানা কথাই মনে আসিতেছিল। চিরপুরাতন হইলেও এই কথাই ভাবিতেছিলাম ኃ ዓV»